হযরত মোজাদ্দেদ আলফেসানি রহঃ এর মোবারক জীবনী (পর্ব-১)
নুরে সেরহিন্দ ( লেখকঃ মামুনুর রশিদ)
১। হযরত আমর ইবনে আ'উপ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সঃ) ইরশাদ ফরমানঃ- দ্বীন নিঃসঙ্গ প্রবাসীর ন্যায় যাত্রা শুরু করেছিল। শেষ পর্যন্ত সেরূপ হয়ে যাবে যেরূপ প্রথম ছিল। অতঃপর যে সকল প্রবাসীর জন্য সুসংবাদ রয়েছে তারা হলো সেই লোক যারা সে বিষয়কে সংস্কার করবে যা আমার পর লোকেরা নষ্ট করে দিয়েছে।
(তিরমিযি শরীফ)।
২। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন নিশ্চয় আল্লাহ্ তায়ালা প্রত্যেক শতকের শুরুতেই এই উম্মতের দ্বীনের সংস্কারের জন্য একজন ‘মুজাদ্দিদ’ প্রেরণ করবেন।
— আবূ দাউদ শরীফ
৩। রাসূলে পাক (স.) বলেনঃ একাদশ শতকের প্রারম্ভে মহান আল্লাহ্ দুনিয়ার বুকে এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন, যিনি উজ্জ্বল ‘নূর’ স্বরূপ হবেন। তার নামকরণ করা হবে আমারই নামানুষারে। দু’জন স্বেচ্ছাচারী বাদশার যুগে তাঁর আবির্ভাব হবে। তাঁর তালিম ও তরবীয়তে অসংখ্য লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে।
— মাওলানা হাসান কাশ্মী (র); রওজাতুল কাইয়ুমিয়া। পৃ. ৩৭-৩৮
৪।হযরত মোজাদ্দেদী আলফেসানী (রহ:) তিনি এমনই একজন উলিল আমর বা নায়িবে রসূল উনার সম্পর্কে স্বয়ং রসূল পাক (সঃ) পবিত্র হাদীস শরীফ বর্ণনা করেছেন।
যেমন তিনি ইরশাদ মোবারক ফরমানঃ-
ﺑﻌﺚ ﺍﻟﻠﻪ ﺭﺟﻼ ﻋﻠﻰ ﺭﺃﺱ ﺍﺣﺪ ﻋﺸﺮ ﻣﺄﺓ ﺳﻨﺔ ﻫﻮ ﻧﻮﺭ ﻋﻈﻴﻢ ﺍﺳﻤﻪ ﺍﺳﻤﻲ
ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺴﻼﻃﻴﻦ ﺍﻟﺠﺎﺑﺮﻳﻦ ﻭﻳﺪﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺑﺸﻔﺎﻋﺘﻪ ﺭﺟﺎﻝ ﺍﻟﻮﻓﺎ
অর্থাৎঃ “হিজরি একাদশ শতাব্দীর আরম্ভকালে মহান আল্লাহ পাক এমন এক ব্যক্তি উনাকে প্রেরণ করবেন, যিনি একটি বৃহৎ নূর। উনার নাম মুবারক হবে আমার নাম মুবারক উনার অনুরূপ। দুই অত্যাচারী বাদশাহর রাজত্বকালের মাঝে তিনি আবির্ভূত হবেন এবং উনার সুপারিশে অগণিত মানুষ বেহেশতে প্রবেশ করবেন”।
পবিত্র হাদীছ শরীফে রসুলুল্লাহ (সাঃ) আরও ইরশাদ মোবারক ফরমানঃ-
ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﺭَﺟُﻞ ﻓِﻲ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﻳُﻘَﺎﻝُ ﻟَﻪ ﺻِﻠَّﺔ
ﻳَﺪﺧُﻞُ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔَ ﺑِﺸِﻔَﺎﻋَﺘِﻪ ﻛَﺬَﺍ ﻭَ ﻛَﺬَﺍ
২। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন নিশ্চয় আল্লাহ্ তায়ালা প্রত্যেক শতকের শুরুতেই এই উম্মতের দ্বীনের সংস্কারের জন্য একজন ‘মুজাদ্দিদ’ প্রেরণ করবেন।
— আবূ দাউদ শরীফ
৩। রাসূলে পাক (স.) বলেনঃ একাদশ শতকের প্রারম্ভে মহান আল্লাহ্ দুনিয়ার বুকে এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন, যিনি উজ্জ্বল ‘নূর’ স্বরূপ হবেন। তার নামকরণ করা হবে আমারই নামানুষারে। দু’জন স্বেচ্ছাচারী বাদশার যুগে তাঁর আবির্ভাব হবে। তাঁর তালিম ও তরবীয়তে অসংখ্য লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে।
— মাওলানা হাসান কাশ্মী (র); রওজাতুল কাইয়ুমিয়া। পৃ. ৩৭-৩৮
৪।হযরত মোজাদ্দেদী আলফেসানী (রহ:) তিনি এমনই একজন উলিল আমর বা নায়িবে রসূল উনার সম্পর্কে স্বয়ং রসূল পাক (সঃ) পবিত্র হাদীস শরীফ বর্ণনা করেছেন।
যেমন তিনি ইরশাদ মোবারক ফরমানঃ-
ﺑﻌﺚ ﺍﻟﻠﻪ ﺭﺟﻼ ﻋﻠﻰ ﺭﺃﺱ ﺍﺣﺪ ﻋﺸﺮ ﻣﺄﺓ ﺳﻨﺔ ﻫﻮ ﻧﻮﺭ ﻋﻈﻴﻢ ﺍﺳﻤﻪ ﺍﺳﻤﻲ
ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺴﻼﻃﻴﻦ ﺍﻟﺠﺎﺑﺮﻳﻦ ﻭﻳﺪﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺑﺸﻔﺎﻋﺘﻪ ﺭﺟﺎﻝ ﺍﻟﻮﻓﺎ
অর্থাৎঃ “হিজরি একাদশ শতাব্দীর আরম্ভকালে মহান আল্লাহ পাক এমন এক ব্যক্তি উনাকে প্রেরণ করবেন, যিনি একটি বৃহৎ নূর। উনার নাম মুবারক হবে আমার নাম মুবারক উনার অনুরূপ। দুই অত্যাচারী বাদশাহর রাজত্বকালের মাঝে তিনি আবির্ভূত হবেন এবং উনার সুপারিশে অগণিত মানুষ বেহেশতে প্রবেশ করবেন”।
পবিত্র হাদীছ শরীফে রসুলুল্লাহ (সাঃ) আরও ইরশাদ মোবারক ফরমানঃ-
ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﺭَﺟُﻞ ﻓِﻲ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﻳُﻘَﺎﻝُ ﻟَﻪ ﺻِﻠَّﺔ
ﻳَﺪﺧُﻞُ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔَ ﺑِﺸِﻔَﺎﻋَﺘِﻪ ﻛَﺬَﺍ ﻭَ ﻛَﺬَﺍ
অর্থাৎঃ “আমার উম্মতের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি আগমন করবেন যাকে “ছেলাহ” উপাধি দেয়া হবে। উনার
সুপারিশের কারণে অগণিত লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে”। সুলত্বানুল আরিফীন হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহ)
উনার ‘জামউল জাওয়াম’ ও ‘জামিউদ্ দুরার’ কিতাবে উল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ দু’খানা উল্লেখ করেছেন।
সুপারিশের কারণে অগণিত লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে”। সুলত্বানুল আরিফীন হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহ)
উনার ‘জামউল জাওয়াম’ ও ‘জামিউদ্ দুরার’ কিতাবে উল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ দু’খানা উল্লেখ করেছেন।
৫। রওযাতুল কাউইমিয়া গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, একদা হযরত গাওসে আজম বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) বাগদাদের কোন এক জঙ্গলে মুরাকাবায় মশগুল ছিলেন। এ সময় কাশ্ফের হালতে তিনি দেখেন যে, হঠাৎ একটি নূর আসমান থেকে প্রকাশ পায়, ফলে সমস্ত বিশ্বজগত আলোকিত হয়। এ সময় তাঁকে বলা হয়, এখন থেকে পাঁচশ বছর পর যখন সারা দুনিয়াতে শিরক ও বিদ'আত ছড়িয়ে পড়বে, তখন একজন অসাধারণ বুজর্গ ওলী উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যে জন্ম গ্রহণ করবে। সে দুনিয়া থেকে শিরক ও বিদ্‘আত দূর করে দ্বীন-ইসলামকে উজ্জীবিত করবে। তাঁর সোহবত স্পর্শ মনির মত হবে এবং তাঁর পুত্র ও খলীফাগণ দ্বীনি খিদমত উত্তমরূপে সম্পন্ন করবে।
এরপর হযরত গাওসে আজম (রহ.) তাঁর খাস খিরকাকে কামালাতে ভরপূর করে স্বীয় পুত্র সৈয়দ তাজুদ্দীন আব্দুর রাজ্জাক (রহ.)-কে সোপর্দ করে নির্দেশ দেনঃ যখন ঐ বুজুর্গের প্রকাশ হবে, তখন যেন এটা তাঁকে প্রদান করা হয়। সেই সময় থেকে ঐ খিরকা মুবারক পর্যায়ক্রমে হস্তান্তরিত হয়ে হযরত পীরানে-পীর (রহঃ)-এর দৌহিত্র হযরত শাহ সেকেন্দার (র) এর মারফতে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহঃ)-এর নিকট পৌঁছে ।
এছাড়া হিজরী পঞ্চম শতকের মাঝামাঝি হযরত শায়খ আহমদ জাম (রহ.) নামক একজন বুজুর্গ ভবিষ্যদ্বানী করেন যে, তাঁর চারশ বছর পর ইসলাম জাহানে ‘আহমদ’ নামে একজন বুজুর্গ ব্যক্তির জন্ম হবে, যিনি মৃতপ্রায় ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত করবেন। হযরত শায়খ আবদুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী (রহ.) ও হযরত শায়খ সেলিম চিশতী (রহঃ) উভয়েই মুরাকাবার মাধ্যমে মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহঃ)-এর জন্মের বাতেনী ইঙ্গিত পেয়েছিলেন।
এছাড়া হিজরী পঞ্চম শতকের মাঝামাঝি হযরত শায়খ আহমদ জাম (রহ.) নামক একজন বুজুর্গ ভবিষ্যদ্বানী করেন যে, তাঁর চারশ বছর পর ইসলাম জাহানে ‘আহমদ’ নামে একজন বুজুর্গ ব্যক্তির জন্ম হবে, যিনি মৃতপ্রায় ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত করবেন। হযরত শায়খ আবদুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী (রহ.) ও হযরত শায়খ সেলিম চিশতী (রহঃ) উভয়েই মুরাকাবার মাধ্যমে মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহঃ)-এর জন্মের বাতেনী ইঙ্গিত পেয়েছিলেন।
জন্ম ও পরিচয় -
ঈসায়ী ১৫৬১ খৃষ্টাব্দ, মুতাবিক ৯৭১ হিজরীর ১৪ই শাওয়াল, শুক্রবার দিবাগত রাতে সুবহে সাদেকের সময় ইমামে-রাব্বানী, মোজাদ্দেদ আলফে সানি শায়খ আহমদ ফারুকী সিরহিন্দী (রহ:) জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি প্রথম কাইউমরূপে পরিচিত। তিনি হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর ২৭ তম বংশধর। হযরত মোজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ:)-এর পিতার নাম হযরত শায়খ আব্দুল আহাদ (রহ:)। হযরত মোজাদ্দেদী আলফেসানী(রহঃ)এর পবিত্র বংশ তালিকা নিম্নে উল্লেখ্য করা হল:
১। হযরত মুজাদ্দেদে আলফে-সানি শায়েখ আহমদ ফারুকী সেরহিন্দি রহঃ
ঈসায়ী ১৫৬১ খৃষ্টাব্দ, মুতাবিক ৯৭১ হিজরীর ১৪ই শাওয়াল, শুক্রবার দিবাগত রাতে সুবহে সাদেকের সময় ইমামে-রাব্বানী, মোজাদ্দেদ আলফে সানি শায়খ আহমদ ফারুকী সিরহিন্দী (রহ:) জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি প্রথম কাইউমরূপে পরিচিত। তিনি হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর ২৭ তম বংশধর। হযরত মোজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ:)-এর পিতার নাম হযরত শায়খ আব্দুল আহাদ (রহ:)। হযরত মোজাদ্দেদী আলফেসানী(রহঃ)এর পবিত্র বংশ তালিকা নিম্নে উল্লেখ্য করা হল:
১। হযরত মুজাদ্দেদে আলফে-সানি শায়েখ আহমদ ফারুকী সেরহিন্দি রহঃ
২। হযরত মখদুম আব্দুল আহাদ রহঃ
৩। হযরত শায়েখ জয়নুল আবেদিন রহঃ
৪। হযরত শায়েখ আব্দুল হাই রহঃ
৫। হযরত শায়েখ হাবিবুল্লাহ রহঃ
৬। হযরত শায়েখ ইমাম রফিউদ্দিন রহঃ
৭। হযরত শায়েখ নাসির উদ্দিন রহঃ
৮। শায়েখ সোলায়মান রহঃ
৯। হযরত শায়েখ ইউসুফ রহঃ
১০। হযরত শায়েখ ইসহাক রহঃ
১১। শায়েখ আব্দুল্লাহ রহঃ
১২। হযরত শায়েখ শোয়ায়েব রহঃ
১৩। হযরত শায়েখ আহমদ রহঃ
১৪। শায়েখ ইউসুফ রহঃ
১৫। শায়েখ শেহাবুদ্দিন রহঃ
১৬। হযরত শায়েখ নাসির উদ্দিন রহঃ
১৭। হযরত শায়েখ মাহমুদ রহঃ
১৮। শায়েখ সালমান রহঃ
১৯। হযরত শায়েখ মাসউদ রহঃ
২০। শায়েখ আব্দুল্লাহ (ওয়ায়েজে আসগর) রহঃ
২১। শায়েখ আব্দুল্লাহ (ওয়ায়েজে আকবর) রহঃ
২২। শায়েখ আব্দুল ফাতাহ রঃ
২৩। হযরত শায়েখ ইসাহাক রঃ
২৪। শায়েখ ইব্রাহিম রহঃ
২৫। হযরত শায়েখ নাসের রঃ
২৬। হযরত শায়েখ আব্দুল্লাহ রাঃ
২৭। আমিরুল মোমেনীন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব(রাঃ)।
শৈশব জীবন -
তাঁর জন্মের সময় সমস্ত বাদ্যযন্ত্র অচল হয়ে পড়ে। সামার হালাত বন্ধ হয়ে যায়। আকবরের সিংহাসন উপুর হয়ে পড়ে। সবাই চেষ্টা করেও সিংহাসন সোজা করতে পারেনি। আকবরের জ্যোতিষরা বলে এক মহাপুরুষের জন্ম হয়েছে যিনি রাজ্য ব্যাপি আলোড়ন সৃষ্টি করবেন। তিনি মাতৃগর্ভ থেকেই ‘মাখতুন’ হালতে অর্থাৎ খাতনাকৃত অবস্থায় ভূমিষ্ট হন। উল্লেখ্য যে, হযরত রাসূলে পাক (স.) ও ‘মাখতুন’ অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করেন।
হযরত মোজাদ্দেদ (রহ:)-এর শৈশবকালীন আরো একটি আশ্চর্যজনক ব্যাপার এই যে, তিনি কখনো নগ্নদেহে থাকতেন না। কখনো তাঁর সতর অনাবৃত হলে, সাথে সাথে তা ঢেকে নিতেন। তিনি সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও হাসি মুখে থাকতেন। তাঁর প্রত্যেকটি আচার-আচরণ ও চাল-চলনের মধ্যে এক বিশেষ নিদর্শন পরিলক্ষিত হতো।
তাঁর জন্মের সময় সমস্ত বাদ্যযন্ত্র অচল হয়ে পড়ে। সামার হালাত বন্ধ হয়ে যায়। আকবরের সিংহাসন উপুর হয়ে পড়ে। সবাই চেষ্টা করেও সিংহাসন সোজা করতে পারেনি। আকবরের জ্যোতিষরা বলে এক মহাপুরুষের জন্ম হয়েছে যিনি রাজ্য ব্যাপি আলোড়ন সৃষ্টি করবেন। তিনি মাতৃগর্ভ থেকেই ‘মাখতুন’ হালতে অর্থাৎ খাতনাকৃত অবস্থায় ভূমিষ্ট হন। উল্লেখ্য যে, হযরত রাসূলে পাক (স.) ও ‘মাখতুন’ অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করেন।
হযরত মোজাদ্দেদ (রহ:)-এর শৈশবকালীন আরো একটি আশ্চর্যজনক ব্যাপার এই যে, তিনি কখনো নগ্নদেহে থাকতেন না। কখনো তাঁর সতর অনাবৃত হলে, সাথে সাথে তা ঢেকে নিতেন। তিনি সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও হাসি মুখে থাকতেন। তাঁর প্রত্যেকটি আচার-আচরণ ও চাল-চলনের মধ্যে এক বিশেষ নিদর্শন পরিলক্ষিত হতো।
হযরত মোজাদ্দেদ (রহ:) দুদ্ধপোষ্য শিশু থাকাবস্থায় একবার ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে তার পিতা-মাতা ও পরিবারের অন্যান্য সকলে তাঁর জীবন সম্পর্কে হতাশ হয়ে পড়েন। এ সময় হযরত শাহ কামাল কায়থিলী (রহ:) সিরহিন্দ শরীফে আসেন। এখবর পেয়ে শায়খ আব্দুল আহাদ (রহ:) তাঁর অসুস্থ শিশুকে দু’আ করার জন্য তাঁর কাছে নিয়ে যান। শিশুকে দেখা মাত্রই হযরত শাহ সাহেব বলেন আল্লাহ তায়ালা এই শিশুর হায়াত দারাজ করুন। এর ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জল। পরিণত বয়সে সে আলেমে হাক্কানী ও আরিফে কামিল হবে এবং আমার মত হাজার হাজার লোক তাঁর আত্মিক তালিমে উপকৃত হবে। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ প্রাপ্তির যে আলো সারা দুনিয়াতে ছড়াবে, তা কিয়ামত পর্যন্ত কখনো নিস্প্রভ হবে না। এরপর শাহ সাহেব তাঁকে কোলে নিয়ে নিজের পবিত্র জিহবা তাঁর মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দেন। শিশু মোজাদ্দেদ (রহ:) অনেকক্ষণ পর্যন্ত উক্ত জিহবা লেহন করতে থাকেন। অত:পর শাহ সাহেব তাঁর পিতাকে সান্তনা দিয়ে বলেন : চিন্তা করবেন না, ইনশা আল্লাহ্ শিশু আরোগ্য লাভ করবে। আল্-হামদু লিল্লাহ, শিশু কাদেরিয়া তরীকার সব নিয়ামত লাভ করলো। আল্লাহ তায়ালা এর দ্বারা তাঁর দ্বীনের খিদমত নিবেন।
শিক্ষা জীবন -
হযরত মোজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ:) শৈশব অতিক্রম করে কৈশোরে পদার্পন করলে তাঁর শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি পিতা-মাতা বিশেষ যত্ন নিতে আরম্ভ করেন। অল্প বয়সে, অতি অল্প সময়ে তিনি কুরআন মাজীদ হিফয করেন। এরপর ‘ইলমে দ্বীনের অনেক কিতাব তিনি তাঁর পিতা শায়খ আব্দল আহাদ (রহ:)-এর নিকট অধ্যয়ন করেন। সিরহিন্দের অন্যান্য বিখ্যাত আলিমের নিকট থেকে ও তিনি দ্বীনি ইলম হাসিল করেন। হযরত শায়খ ইয়াকুব কাশ্মিরী (রহ:), হযরত মাওলানা কাযী বাহ্লুল (রহ:), স্বনামধন্য তর্কশাস্ত্রবিদ হযরত মাওলানা কামাল (রহ:) প্রমুখ আলিম ও বুযুর্গানে-দ্বীন তাঁর উস্তাদ ছিলেন।ইলমে তাসাউফ বা মারিফাত সম্বন্ধীয় কিতাব ‘তাসাউফ’, আওয়ারিফুল মাআরিফ, ফুসুসুল হিকাম-প্রভৃতি তিনি সে যুগের শ্রেষ্ঠ উস্তাদদের নিকট পাঠ করেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি জাহেরী ও বাতেনী ইলমের এক বিরাট ভান্ডারে পরিনত হন। এরপর তিনি ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। বিভিন্ন দেশে থেকে দলে দলে শিক্ষার্থী তাঁর নিকট আসতে থাকে এবং দিন-রাত শিক্ষা দেওয়ার কাজ চলতে থাকে। তাঁর দারসে হাদীস ও তাফসীরের হাল্কা সব সময় শরগরম থাকতো। বহু লোক তাঁর নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ শেষ করে সনদ হাসিল করেন। অবশেষে তিনি ‘ইলমে-জাহেরীতে’ বা জাহেরী-ইলমে’ এরূপ কামালাত অর্জন করেন যে, তিনি মুজতাহিদের দরজায় উন্নীত হন।
প্রথমে তিনি তাঁর পিতার নিকট থেকে ইলমে মারিফাত অর্জন করেন এবং তাঁরই নিকট থেকে চিশতিয়া তরীকার খিলাফত প্রাপ্ত হন। এরপর তিনি কাদেরীয় তরীকার শ্রেষ্ঠ বুজর্গ হযরত শাহ সিকান্দার (রহ:)-এর নিকট থেকে এই তরীকার খিলাফত লাভ করেন। সে সময় ‘কুব্রাবিয়া’ তরীকার খুবই প্রসিদ্ধি ও প্রসার ছিল। হযরত মাওলানা ইয়াকুব (রহ:) ছিলেন এই তরীকার বিখ্যাত বুজর্গ। হযরত মোজাদ্দেদ (র.) তাঁর থেকে এই তরীকার খিলাফত লাভ করেন। এসময় তাঁর পিতা শায়খ আব্দুল আহাদ (রহ:)-এর অন্তিম মূহুর্ত এসে পড়ে। ইন্তিকালের আগে তিনি তাঁর পুত্র মোজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ:) কে তাঁর সমস্ত বাতেনী শক্তি দান করে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যান। এভাবে তিনি সে সময় প্রচলিত সমস্ত তরীকার কামালিয়াত হাসিল করেন এবং পিতার নির্দেশ মতো নকশবন্দীয়া তরীকায় পরবর্তী কালে কামালিয়াত হাসিল করে ‘ইলমে মারিফাতের মহাসাগরে পরিণত হন।
জাহেরী ও বাতেনী ইলম হাসিলের পর মোজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ:) বাদশাহ আকবরের রাজধানী আগ্রায় যান। বাদশার সেনা-বাহিনীর অনেকেই তাঁর জ্ঞানের গভীরতায় মুগ্ধ হন। এ সময় অনেক ‘আলিম তাঁর নিকট থেকে ইলমে হাদীস ও তাফসীরের সনদ গ্রহণ করনে।’ এর ফলে তাঁর ‘ইলম ও ইজ্তিহাদের খ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আগ্রায় অবস্থান কালে হযরত মোজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ:)-এর খ্যাতি এমন ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে, শাহী দরবারের দর্শন ও তর্কশাস্ত্রে বিখ্যাত ‘আলিম আবুল ফযল ও ফৈযী তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হন এবং মাঝে মাঝে তারা তাঁর মজলিসে আগমন করতেন।
বিবাহ -
ইমামে রাব্বানী হযরত মোজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ:) দীর্ঘদিন আকবরাবাদে অবস্থান করার পর তাঁর পিতা হযরত আব্দুল আহাদ (রহ:) তাঁকে সিরহিন্দ শরীফে নিয়ে যান। পথিমধ্যে বাদশাহ আকবরের এক বিশেষ আমাত্য শায়খ সুলতানের কন্যার সাথে হযরত মোজাদ্দেদ (রহ:) -এর বিবাহ সম্পন্ন হয়।
হযরত মোজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ:) শৈশব অতিক্রম করে কৈশোরে পদার্পন করলে তাঁর শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি পিতা-মাতা বিশেষ যত্ন নিতে আরম্ভ করেন। অল্প বয়সে, অতি অল্প সময়ে তিনি কুরআন মাজীদ হিফয করেন। এরপর ‘ইলমে দ্বীনের অনেক কিতাব তিনি তাঁর পিতা শায়খ আব্দল আহাদ (রহ:)-এর নিকট অধ্যয়ন করেন। সিরহিন্দের অন্যান্য বিখ্যাত আলিমের নিকট থেকে ও তিনি দ্বীনি ইলম হাসিল করেন। হযরত শায়খ ইয়াকুব কাশ্মিরী (রহ:), হযরত মাওলানা কাযী বাহ্লুল (রহ:), স্বনামধন্য তর্কশাস্ত্রবিদ হযরত মাওলানা কামাল (রহ:) প্রমুখ আলিম ও বুযুর্গানে-দ্বীন তাঁর উস্তাদ ছিলেন।ইলমে তাসাউফ বা মারিফাত সম্বন্ধীয় কিতাব ‘তাসাউফ’, আওয়ারিফুল মাআরিফ, ফুসুসুল হিকাম-প্রভৃতি তিনি সে যুগের শ্রেষ্ঠ উস্তাদদের নিকট পাঠ করেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি জাহেরী ও বাতেনী ইলমের এক বিরাট ভান্ডারে পরিনত হন। এরপর তিনি ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। বিভিন্ন দেশে থেকে দলে দলে শিক্ষার্থী তাঁর নিকট আসতে থাকে এবং দিন-রাত শিক্ষা দেওয়ার কাজ চলতে থাকে। তাঁর দারসে হাদীস ও তাফসীরের হাল্কা সব সময় শরগরম থাকতো। বহু লোক তাঁর নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ শেষ করে সনদ হাসিল করেন। অবশেষে তিনি ‘ইলমে-জাহেরীতে’ বা জাহেরী-ইলমে’ এরূপ কামালাত অর্জন করেন যে, তিনি মুজতাহিদের দরজায় উন্নীত হন।
প্রথমে তিনি তাঁর পিতার নিকট থেকে ইলমে মারিফাত অর্জন করেন এবং তাঁরই নিকট থেকে চিশতিয়া তরীকার খিলাফত প্রাপ্ত হন। এরপর তিনি কাদেরীয় তরীকার শ্রেষ্ঠ বুজর্গ হযরত শাহ সিকান্দার (রহ:)-এর নিকট থেকে এই তরীকার খিলাফত লাভ করেন। সে সময় ‘কুব্রাবিয়া’ তরীকার খুবই প্রসিদ্ধি ও প্রসার ছিল। হযরত মাওলানা ইয়াকুব (রহ:) ছিলেন এই তরীকার বিখ্যাত বুজর্গ। হযরত মোজাদ্দেদ (র.) তাঁর থেকে এই তরীকার খিলাফত লাভ করেন। এসময় তাঁর পিতা শায়খ আব্দুল আহাদ (রহ:)-এর অন্তিম মূহুর্ত এসে পড়ে। ইন্তিকালের আগে তিনি তাঁর পুত্র মোজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ:) কে তাঁর সমস্ত বাতেনী শক্তি দান করে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যান। এভাবে তিনি সে সময় প্রচলিত সমস্ত তরীকার কামালিয়াত হাসিল করেন এবং পিতার নির্দেশ মতো নকশবন্দীয়া তরীকায় পরবর্তী কালে কামালিয়াত হাসিল করে ‘ইলমে মারিফাতের মহাসাগরে পরিণত হন।
জাহেরী ও বাতেনী ইলম হাসিলের পর মোজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ:) বাদশাহ আকবরের রাজধানী আগ্রায় যান। বাদশার সেনা-বাহিনীর অনেকেই তাঁর জ্ঞানের গভীরতায় মুগ্ধ হন। এ সময় অনেক ‘আলিম তাঁর নিকট থেকে ইলমে হাদীস ও তাফসীরের সনদ গ্রহণ করনে।’ এর ফলে তাঁর ‘ইলম ও ইজ্তিহাদের খ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আগ্রায় অবস্থান কালে হযরত মোজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ:)-এর খ্যাতি এমন ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে, শাহী দরবারের দর্শন ও তর্কশাস্ত্রে বিখ্যাত ‘আলিম আবুল ফযল ও ফৈযী তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হন এবং মাঝে মাঝে তারা তাঁর মজলিসে আগমন করতেন।
বিবাহ -
ইমামে রাব্বানী হযরত মোজাদ্দেদ আলফে সানী (রহ:) দীর্ঘদিন আকবরাবাদে অবস্থান করার পর তাঁর পিতা হযরত আব্দুল আহাদ (রহ:) তাঁকে সিরহিন্দ শরীফে নিয়ে যান। পথিমধ্যে বাদশাহ আকবরের এক বিশেষ আমাত্য শায়খ সুলতানের কন্যার সাথে হযরত মোজাদ্দেদ (রহ:) -এর বিবাহ সম্পন্ন হয়।
No comments