শিয়া আক্বিদা ও সুন্নী আক্বিদা পর্ব-২

আল্লামা কাযী মুহাম্মদ মঈন উদ্দীন আশরাফী

শিয়া সম্প্রদায় ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদা: 
শিয়া সম্প্রদায় হযরত ওসমান যিননুরাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর খেলাফতকালীন রাজনৈতিক গোলযোগ এবং শাহাদাত বরণের সময় সৃষ্ট একটি ভ্রান্ত দল। এই দলের মূল প্রবক্তা ইয়েমেনের রাজধানী ‘সানা’র এক প্রভাবশালী  ইয়াহুদী আবদুল্লাহ ইবনে সাবা। ইবনে সাবা’র বংশ ইয়াহুদিদের ধর্মীয় জ্ঞান ও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় ছিল। ইবনে সাবা স্বয়ং তাওরাত-ইঞ্জিলের অভিজ্ঞ আলেম ছিলো। সে তী² মেধা, দূরদর্শিতা, সতর্কতা, অটলতাল অধিকারী ছিল। তার মাথায় কুট-কৌশলের ভান্ডার ছিল। মানুষের মন-মস্তিক উপলদ্ধির বেশ ক্ষমতা ছিল। সুযোগ ও ক্ষেত্র নির্ণয়ে বেশ পটু ছিল। ইসলামের সার্বিক বিজয়ের ফলে ইয়াহুদীদের অস্তিত্ব চরমভাবে বিপন্ন হবার বিষয়টি সব সময় তাকে পীড়া দিত। এর প্রতিশোধ গ্রহণের মোক্ষম সুযোগের অপেক্ষায় ইবনে সাবা সকল প্রকার কুট-কৌশল নিয়ে প্রহর গুণছিল। হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহুর খেলাফত কালকে যথোপুক্ত সময় বিবেচনা করে সে মদিনা আগমন করে তৃতীয় খফিলা হযরত ওসমান রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহুর হাতে ইসলাম কবুল করে। অতঃপর তাঁর খেলাফতকালীন রাজনৈতিক গোলযোগের সুযোগে সে তার ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে শুরু করে। উমাইয়াদের বিরুদ্ধে হাশেমী অপরাপর আরবদের ক্ষেপাতে আরম্ভ করে। সরলপ্রাণ মুসলমান অনেকে তার কুট-কৌশলের জালে আটকে পড়ে। অতঃপর সে হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা শুরু করে। ফলে তাকে মদীনা শরীফ থেকে বের করে দেয়অ হয়। সে বসরা গমণ করে সেখঅনে তার কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। অতঃপর যখন সে দেখল, কিছু মুসলমান তার অনুগত হয়ে উঠেঠে, তখন সে তার মূল কর্মসূচী বাস্তবায়নে পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ হিসেবে মুসলমানদের মধ্যে এক নতুন ভিত্তিহীন মনগড়া আক্বীদা প্রচার আরম্ভ করে। তা হলো-“হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় পৃথিবীতে আগমন করবেন”। এর পূর্বে সে নিজেকে “আহলে রাসুল” বা নবী বংশের বড় ভক্ত হিসেবে প্রকাশ করে। সে তার ভ্রান্ত আক্বীদার পক্ষে আয়াতে কোরআন-


অথাৎ হে প্রিয় রাসুল (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) “নিশ্চয় যিনি কোরআনের বিধান পালন আপনার উপর ফরয করেছেন তিনি আপনাকে প্রত্যার্তন স্থলের দিকে ফিরিয়ে দিবেন।” (সূরা ক্বাসাস) সে কৃত্রিমভাবে দলিল গ্রহণ করে মনগড়া ব্যাখ্যা দেয়। অতঃপর সে শিয়াদের অন্যতম আক্বীদা ‘ইমামত’ এর প্রচার শুরু করে। অর্থাৎ প্রত্যেক নবীর একজন ‘ওয়াসি’ উযির বা স্থলাভিষিক্ত থাকে। যেমন হযরত মুসা আলাইহিস সালামে উযির ছিলেন হযরত ইউশা ইবনে নু’ন আলাইহিস সালাম। তেমনিভাবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহিস ওয়াসাল্লামের ‘ওসাসি’ হলেন হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু। তাওহীদ, রিসালাতের মতো ‘ইমামতের উপরও বিশ্বাস স্থাপন করা ফরয। পরবর্তীতে এ আক্বিদা আরো বিস্তৃত হয়ে এরূপ পরিগ্রহ করে যে, নবীগণ যেভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত, ইমামগণও সেভাবে প্রেরিত। ইমাম নবীর মত শরীয়তের বিধানসমূহ প্রবর্তন করবেন এবং কোরআনের যে বিধান যখন ইচ্ছা মানসুখ বা রহিত করতে পারেবন। আলে রাসুল বা নবী বংশের মুহাব্বতের উপর কৃত্রিমভাবে প্রতিষ্ঠিত ইবনে সাবার এ ভ্রান্ত আক্বিদাগুলো উমাইয়া বিরোধী লোকজন সহজে গ্রহণ করলো এবং এরা ইসলামের একটি নতুন ফিরকা ‘শিয়া’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। পরবর্তীতে এদের মধ্যে অনেক দল-উপদলের আবির্ভাব ঘটে। এগুলো পৃথক পৃথক কুফরী আক্বীদা রয়েছে। তন্মধ্যে ইসনা আশারীয়া  বা দ্বাদশ ইমামী ও ইসমাঈলীয়া বা সপ্ত ইমামী সবচেয়ে উল্লেখযোগ। ১৫০২ খিষ্টাব্দে ইরানের সাফাভী বংশের প্রতিষ্ঠাতা শাহ ইসমাঈল দ্বাদশ ইমামে বিশ্বাস শিয়াদের মতবাদকে ইরানের রাষ্ট্রীয় ধর্মে হিসেবে বিদ্যামান। ইরান ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনী দ্বাদশ ইমামী শিয়া।

শিয়া আক্বাঈদ:
শিয়া কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ আলীউন ওয়াসিউল্লাহ ওয়া ওয়াসিও রাসুলিল্লাহ ওয়অ খলীফাতুহু বেলাফাসলিন।
অর্থাৎ আল্লঅহ ব্যতিত কোন উপাস্য নেই। মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহিস ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসুল। আলী আল্লাহর বন্ধু। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াসি ও তাঁর খলিফা। অন্য বর্ণনায়, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ ওয়া আলীউন খলীফাতুল্লাহ।
(শিয়া-সুন্নী ইখতেলাফ, পৃষ্ঠা ১৬, মুসলিম সংস্কৃতির ইতিহাস, পৃষ্ঠা ৩২।

আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত:
ঈমানের মূলমন্ত্র কালেমা-এ তাইয়্যেবা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ।” অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতিত কোন উপাস্য নেই, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল।

শিয়া আক্বাঈদ:
আক্বীদা-এ ইমামত অর্থাৎ মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় যাবতীয় বিষয়েল একমাত্র কর্ণধার যিনি তিনি ইমাম। এইমাম নবী রাসুলেরর ন্যায় আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত এবং নিষ্পাপ। ইমামের আনুগত্য করা ফরয যেমন নবী রাসুলের আনুগ্যত উম্মতের উপর ফরয। ইমামদের মর্যাদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমান এবং অন্যান্য নবীদের চেয়ে অনেক উর্ধ্বে। শুরু উম্মতের উপর নং বরং সমগ্র পৃথিবীল উপর যে কেউ হুকুমত (রাজত্ব) করবে, সে হক ধ্বংসকারী, যালিম ও সীমালংঘনকারী। ইমাম নবীর মতো শরীয়তের বিধান প্র প্রবর্তন করেন এবং কোরআনের যে কোন বিধান যখন ইচ্ছা করেন মানসুখ বা রহিত করতে পারেন।
(ইরানী ইনকিলাব, পৃষ্ঠা ২৮, শিয়া-সুন্নী ইখতিলাফ পৃষ্ঠা ৯, মুসলিম সংস্কৃতি ইতিহাস, পৃষ্ঠা ২৩৩)

আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত: 
ইমাম খোলাফায়ে রাশেদীন-এর নির্বঅচন পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন। তিনি তাঁর কার্যকলাপের জন্য জনগণের নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য। ইমামের জন্য নিষ্পাপ হওয়া জরুরী নয়। শুধু নবী-রাসুলগণই মাসুম বা নিষ্পাপ। কোন ইমাম  বা ওলী কোন নবীর স্তরে পৌঁছতেই পারে না। ইমামের মর্যাদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমান মনে করে কিংবা অন্যান্য নবীদের চেয়ে উর্ধ্বে মনে করা নবী রাসুলগণের মহান মর্যাদার চরম অবমাননান বিধায় শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে নির্বাচিত যে কোন মুসলমান, এমনকি নিগ্রো হাবশী দাসও খরীফা নির্বাচিত হতে পারেন। এমতাবস্থায়ও তার পূর্ণ আনুগত্য করা মুসলমানদের উপর একান্ত কর্তব্য। ইমাম কোরআন সুন্নাহর কোন বিধান মানসুখ বা রহিত করার নূন্যতম ক্ষমতা রাখেন না। কোরআনের কোন বিধান রহিত করার অধিকার একমাত্র মহান আল্লাহও তাঁর প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের।

শিয়া আক্বাঈদ:
শিয়াদের একটি বিরাট অংশ, বিশেষ করে ইসমাঈলিয়ারা বিশ্বাস করে যে, ইমাম ইসমাঈল আখেরী নবী। (মুসলিম সংস্কৃতিক ইতিহাস, পৃষ্ঠা ২৩৩)

আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত:
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাতমুন্ নবীয়্যীন অর্থাৎ শেষ নবী। তাঁর পর কোন নবীর আবির্ভাবের সম্ভাবনায় বিশ্বাস করা পবিত্র কোরআনের সরাসরি অস্বীকার। এটা নিঃসন্দেহে কুফরী।

শিয়া আক্বাঈদ: 
হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর সকল সাহাবা কেরাম নিষ্পাপ ইমাম হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর হাতে বাইআত না করার করাণে কাফির এবং মুরতাদ হয়ে গেছেন। (শিয়া-সুন্নী ইখতিলাফ,পৃষ্ঠা ১২)
অপর বর্ণানায় শুধুমাত্র তিনজন সাহাবী ইসলামের উপর অটল ছিলেন। ঐ তিনজন হলেন, হযরত মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ, হযরত আবু জার গিফারী ও হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহুম। (ইরানী ইনকিলাব, পৃষ্ঠা ২২৩)

আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত:
হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি সয়াসাল্লামের ওফাতের পর সকল সাহাব ঈমান ইসলামের উপর অটল অবিচল ছিলেন এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বীন রক্ষায় জান-মাল দিয়ে জিহাদ করেছেন। হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে খলিফা নির্বাচিত করে সমায়োচিত সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। শিয়াদের ও আক্বীদা রাসুল সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতের বিরুদ্ধে এক ধরণের প্রকাশ্য বিদ্রোহ। কোন মুসলমান বিশ্বাস করতে পারে না যে, তেইশ বছরে হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম কৃর্তক তৈরী সাহাবা কেরামের এ বিরাট জামা’আত তাঁর ওফাতের সাথে সাথে সকলেই পথভ্রষ্ট হয়ে গেছেন।

শিয়া আক্বাঈদ:
তাহরীকে কোরআন অর্থাৎ শিয়াদের মতে কোরআন শরীফ যেভাবে অবতীর্ণ হয়েছে, সেভাবে সংকলিত হয়নি; এতে অনেক বিকৃত হয়েছে। কোরআন শরীফের সর্বমোট আয়াতের সংখ্যা ১৭,০০০ (সতের হাজার)। হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর খেলাফত ও আহলে বায়তে রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কিত আয়াতগুলো কোরআন শরীফ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। বর্তমান আয়াতের সর্বমোট সংখ্যঅ ৬,৬৬৬ (ছয় হাজার ছয়শত ছেষট্টি)। শিয়াদের মতে ১০,৩৩৪ (দশ হাজার তিনশত চৌত্রিশ) আয়াত বাদ দেয়া হয়েছে। যে বিশ্বাস করে যে, কোরআন একমাত্র হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ও তৎপরবর্তী ইমামগণ সংকলন করেছেন। ঐ কোরআন নিয়ে তাদের ইমামে গায়েব (অদৃশ্য ইমাম) “সুররামানরা” পাহাড়ে অদৃশ্য হয়ে গেছেন। যখন তিনি আত্মপ্রকাশ করবেন, তখন “মাসহাফে আলী’ বা হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কর্তৃক সংকলিত কোরআন নিয়ে আসবেন। (ইরানী ইনকিলাব পৃষ্ঠ ২৫৯, ইসলাম আওর খামেনী মাযহাব পৃষ্ঠা ৫৪ ও ৫৫)

আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত:
পবিত্র কোরআন যেভাবে অবর্তীণ হয়েছে, সেভাবে সংকলিত ও সংরক্ষিত। এর নিশ্চয়তা স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা দিয়েছেন। কোরআন শরীফের সর্বমোট আয়াত সংখ্যা ৬,৬৬৬ (ছয় হাজার ছয়শত ছেষট্টি) আহলে বায়াতে রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা ওয়াসাল্লাম বা নবী বংশের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কিত আয়াত বর্তমানেও পবিত্র কোরআনে বিদ্যমান। হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ও সর্বশেষ হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতায় পবিত্র কোরআন যথাযথভাবে সংরলিত হয়েছে। ঐ কোরআন করিম অদ্যবধি মুসলমানদের মধ্যে অবিকৃত রূপে বিদ্যামন। এতদবিষয়ে বিশ্বাস ও ধ্যান-ধারণা অমূলক, মনগড়া, ভ্রান্ত ও বিভ্রান্তিকর। তার প্রমাণ পায়। দেড়শত বছর পূর্বে শিয়াদের কোন কোন আলিম “কোরআন বিকৃতির” এ জঘন্য আক্বিদাকে ঘৃণ্য বলে মন্তব্য করেছেন। তাদের বিশুদ্ধ কিতাব “উসুলে কাফী” ও তাদের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও মুজতাহিদ নুরী তাবুরুসীর “ফাসলুল খেতাব ফী এসবাতে তাহরীফে কিতাবে রাব্বীল আরবার” নামক কিতাবে কোরআন শরীফ বিকৃত হবার বিষয়ে ভিত্তিহীন বর্ণনায় পরিপূর্ণ।
(ইসলাম আওর খামেনী মাযহাব পৃষ্ঠা ৫৪ ও ৫৫ ইরানী ইনকিলাব পৃষ্ঠা ২৬১ ও ২৬২) 

শিয়া আক্বঈদ:
শিয়াদের মতে হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘গাদীরে খোম’ নামক স্থানে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু  তা’আলা আনহুকে তাঁর পরবর্তী স্থলাভিষিক্ত ও খলিফা ঘোষণা করেছেন। সুতরাং খেলাফতের একমাত্র অধিকারী হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু।  প্রথম তিনজন খলিফা যথাক্রমে-হযরত আবু বকর সিদ্দিক, হযরত ওমর ফারুক-এ-আযম ও হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম খেলাফতের অবৈধ দাবীদার ও দখলদার। তাঁরা হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আনহুকে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে খেলাফতের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। বিধায় তারা যালিম, মুনাফিক ও জাহান্নামী। এতে শিয়াগণ হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর তুলনায় প্রথম দু’জন খলিফাকেই জঘন্য অপরাধী মনে করে। তারা বলে, হযরত আবু বকর সিদ্দিক, হযরত ওমর ফারুক-এ-আযম উভয়ে হযরত আরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ও আহলে বায়তে রাসুল (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর অন্যায় ও যুলুম করেছে। হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু মনগড়া হাদিসের মাধ্যমে হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহাকে তাঁর পিতার উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। (ইসলাম আওর খামেনী মাযহাব পৃষ্ঠা ৪৮)।

আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত:
হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলাইহ ওয়াসাল্লাম জীবনের শেষদিকে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে মসজিদে নব্বী শরীফে তাঁর স্থলে ইমামতি প্রদানের মাধ্যমে তাঁর পরে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুও আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর খেলাফতের দলিল পেশ করেছেন। (তারীখুল খোলাফো)। ইমাম দারে কুতনী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহ তা’আলা আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন আমরা হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা ওয়াসাল্লামের নিকট প্রবেশ করেন আবেদন করলাম হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমাদের জন্য খলিফা মনোনয় করে দিন। তিনি বললেন না। আল্লাহ তা’আলা যদি তোমাদের কল্যাণ কামনা করেন তাহলে তোমাদের মধ্য থেকে সর্বোত্তম ব্যক্তিকে তোমাদের উপর খলিফা নিযুক্ত করবেন। হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, আল্লাহ তা’আলা আমাদের মঙ্গল চেয়েছেন-অতঃপর হযরত আবু বকর ছিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু আমাদের উপর খলিফা নিযুক্ত করেছেন। সুন্নীদের মতে শ্রেষ্ঠত্ব, যোগ্যতা ও সার্বিক বিবেচনায় খোলাফায়ে রাশেদীন যথাক্রমে হযরত আবু বকর সিদ্দিক, হযরত ওমর ফারুক-এ-আযম, হযরত ওসমান ও হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম চারজনই বৈধ ও নির্বাচিত খলিফা। নবীদের পরে সর্বোত্তম ব্যক্তি এ চার জন।
(শহরে আক্বাঈদ-এ-নাসাফী, মুসলিম সংস্কৃতির ইতিহাস,পৃষ্ঠা ২৩৩, ইসলাম আওর খামেনী মাযহাব, পৃষ্ঠা ২৫০)
চলবে===


প্রকাশিত:
মাসিক আর-রায়হান
৩য় বর্ষ, ২৮ সংখ্যা, রবিউল সানি ১৪৩৮ হিজরী,
জানুয়ারী ২০১৭ ইং, মাঘ-১৪২৩ বঙ্গাব্দ।


No comments

Powered by Blogger.