গাউসুল আজম হযরত
আবদুল
কাদের জিলানী (রহঃ)
‘ফাতেহা-ই-ইয়াজদহম’ বা ‘গিয়ারবী শরীফ’ :
ওলীকুলের
শ্রেষ্ঠ, কুতুবে রব্বানী,
মাহবুবে সোবহানী গাওসুল
আজম হযরত মুহিনুদ্দিন
আবদুল কাদের জিলানী
(র.)-এর ওফাত
দিবস হিসেবে পরিচিত
এই পবিত্র দিবসটি
বাংলাদেশ,
ভারত, পাকিস্তানসহ উপমহাদেশের
প্রায় সর্বত্র যথাযথ
মর্যাদা সহকারে উদযাপিত
হয়ে থাকে। তারই
প্রবর্তিত
কাদেরিয়া
তরিকাপন্থী
কোটি কোটি মুসলমানের
নিকট দিবসটির তাৎপর্য
ও মাহাত্ম্য অপরিসীম।
তরিকতের ইমাম মহান
সাধক হযরত গাওসুল
আজমের রূহানী,
আধ্যাত্মিক,
ভক্ত-অনুসারীর প্রাণপ্রিয়
এই ‘বড় পীর’
দুনিয়াময়
ইসলামের যে আলোক
শিখা জ্বালিয়ে গেছেন
তা অনন্তকাল অনির্বাণ
থাকবে।
বংশধারা :
গাওসুল আযম হযরত
আবদুল কাদের জিলানী
(র.) মা-বাবা
উভয় দিক থেকে
ছিলেন হাসানী-হোসাইনী
অর্থাৎ হযরত আলী
(র.)-এর বংশধর।
তিনি হিজরী ৪৭০
সালের ১ রমজান
মোতাবেক ১০৭৭-৭৮
খৃস্টাব্দে
জন্মগ্রহণ
করেন এবং হিজরী
৫৬০-৬১ সাল
মোতাবেক ১১৬৬ খৃস্টাব্দে
ইন্তেকাল
করেন। তখন তার
বয়স হয়েছিল ৯০-৯১ বছর।
বাগদাদে তিনি শিক্ষা
লাভ করেন। কোরআন
তফসীর, হাদীস, ফেকাহ,
বালাগত (অলংকার শাস্ত্র,
সাহিত্য), ইতিহাস অংকশাস্ত্র, যুক্তিবিদ্যা
প্রভৃতি প্রচলিত সব
বিষয়ে সনদ লাভ
করেন। তিনি যুগ
শ্রেষ্ঠ সাধক হিসেবে
এবং শরিয়ত ও
তরিকতের অনন্য সাধারণ
ইমাম হিসেবে এবং
ইসলামের পূর্ণজীবনদানকারী হিসেবে সর্বোচ্চ
আসনে সমাসীন ছিলেন।
ওফাত দিবস :
হযরত গাওসুল আজমের
ওফাত দিবস ‘ফাতেহা-ইয়াজদহম’ বা
‘গিয়ারভী শরীফের’ প্রথমোক্ত
নামটি অধিক পরিচিত
এবং সূচনা কাল
থেকেই এখানে প্রচলিত।
দিবসটির উদ্ভব ও
প্রচলন সম্পর্কে কিছু
চমৎকার বিবরণ পাওয়া
যায়, যার নির্ভরযোগ্যতা
সম্পর্কে
প্রশ্ন করার অবকাশ
থাকলেও দিবসটির ব্যাপক
জনপ্রিয়তা
সর্বজন স্বীকৃত। মুসলিম
বিশ্বের আওলিয়ায়ে
কেরামের ইতিহাসে গাওসুল
আজম হযরত আব্দুল
কাদের জীলানী (র.)-এর স্থান
নিঃসন্দেহে
সকলের ঊর্ধ্বে। এখানে
তার ওফাত দিবস
নিয়ে কিছুটা আলোচনা
করা যাক।
হযরত গাওসুল আজম
হিজরী ৫৬১ সালের
রবিউস সানী মাসে
ওফাত পান। খ্রিস্ট
সাল অনুযায়ী যা
ছিল ১১৬৬ সাল,
তারিখ সম্পর্কে মতভেদ
রয়েছে। ৮, ৯,
১১, ১৩ এবং
১৭ পর্যন্ত এ
পাঁচটি তারিখের উল্লেখ
পাওয়া গেলেও সর্বসম্মত
মত হচ্ছে ১১
রবিউস সানী। ফারসি
ভাষায় ১১ কে
ইয়াজদহম এবং উর্দুতে
‘গিয়াবা’ বলা হয়।
এবং গিয়াবা থেকে
‘গিয়ারভী’ শরীফের উৎপত্তি।
দুটি নামের প্রচলন
করে থেকে এবং
কীভাবে শুরু হয়
সে সম্বন্ধে কিছুটা
মতভেদ দেখা যায়।
কেউ কেউ বলেন,
হযরত বড় পীর
সাহেব নিজেই এটা
পালন করতেন। আবার
কেউ কেউ বলেন,
এটা তার ওরস
দিবস যা তার
ইন্তেকালের
পর মাসায়েখ ও
ভক্ত-অনুসারীগণ পালন
করতে আরম্ভ করেন।
প্রথম মতের সমর্থন
পাওয়া যায় আল্লামা
ইমাম ইয়াফেযী কাদেরী
(র.)-এর বক্তব্য
হতে। আল্লামা ইয়াফেযী
(র.) বলেন, ‘ফাতেহা
ইয়াজদহম’ হযরত রাসূলে
করীম (স.)-এর
ওফাত দিবস, যা
বড় পীর সাহেব
তার জীবনে পালন
করতে থাকেন। এ
সম্বন্ধে
আল্লামা ইয়াফেযী তার
বিখ্যাত পুস্তক ‘কোরবাতুন
নাজেরা’-তে বলেছেন,
একদা বড় পীর
সাহেবের ‘গিয়ারভী’ শরীফের
আলোচনা হতে থাকলে
তিনি (পুস্তক রচয়িতা)
বলেন, এর নিয়ম
এই যে, বড়
পীর সাহেব রবিউস
সানী মাসের ১৩
তারিখে হুজুর (স.)-এর ‘খতম
শরীফ’ নির্ধারিত করে
দেয়া হয়। তারপর
অন্যরাও তার অনুকরণে
একাদশ তারিখে হযরত
রাসূলে করীম (স.)-এর নামে
খতম পড়াতে আরম্ভ
করেন। ক্রমশ এটা
হযরত বড় পীর
সাহেবের ‘গিয়ারভী শরীফ’
নামে প্রসিদ্ধি লাভ
করে। এখন তার
ওরসও একাদশ তারিখে
অনুষ্ঠিত
হয়ে থাকে। অর্থাৎ
তার ওফাত সর্বসম্মতভাবে
১১ রবিউস সানী
দিবসে।
উল্লেখিত
বিবরণে একটা খটকা
থেকে যাচ্ছে যে,
প্রচলিত প্রথা অনুসারে
কারো মৃত্যুর পর
চল্লিশতম
দিবসকে ফারসিতে ‘চেহলাম’
বলা হয়। বর্ণিত
বক্তব্যে
রাসূলুল্লাহ
(স.)-এর ‘চেহলাম’
১১ রবিউস সানী
কিভাবে সঠিক হয়।
কেননা রাসূলুল্লাহ (স.)-এর ওফাত
দিবস ১২ রবিউল
আউয়াল হতে হিসাব করা
হলে চেহলাম বা
চল্লিশ পূর্ণ হতে
গোটা রবিউস সানী
শেষ করে পরবর্তী
জমাদিউল আউয়াল মাসেরও
তিন দিন হিসাব
করতে হয়। পক্ষান্তরে
রাসূলুল্লাহ
(সা.)-এর ওফাত
৯ রবিউল আউয়াল
ধরা হলে রবিউস
সানী মাসের ১১
তারিখ পর্যন্ত ৪০
দিন হয় যদি
রবিউল আউয়ালকে ৩০
দিন ধরা হয়।
তা হলে প্রশ্ন
আসে বড় পীর
সাহেব রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সেই
কথিত চেহলাম কোন
তারিখ হতে হিসাব
করতেন? নির্ভরযোগ্য ইতিহাস
সূত্রের মাধ্যমে বিষয়টির
সুরাহা হওয়া আবশ্যক।
আর বড় পীর
সাহেবের ওফাত দিবসকে
‘গিয়ারভী’ শরীফ বা
ফাতেহা-ই-ইয়াজদহম
যাই বলা হোক
না কেন তাতে
কোনো বিতর্কের সুযোগ
থাকে না এবং
রাসূলুল্লাহ
(স.)-এর চেহলাম
হিসাব করার প্রশ্নও
আসে না, যা
এক নতুন বিতর্কের
সৃষ্টি করতে পারে।
সম্রাট আওরঙ্গজেবের (আলমগীর)
ওস্তাদ এবং নূরুল
আনোয়ার নামক বিখ্যাত
গ্রন্থের
রচয়িতা মোল্লা জুযুনের
ছেলে মোল্লা মোহাম্মদ
তার পুস্তকে লিখেছেন
যে, অন্যান্য মাসায়েখের ওরশ
বছর শেষে অনুষ্ঠিত
হয়। কিন্তু হযরত
বড় পীর সাহেবের
এটা এমন একটা
বৈশিষ্ট্যপূর্ণ
শান যে, বুজুর্গানে
দ্বীন কর্তৃক তার
ওরস গিয়ারভী শরীফ
প্রতি মাসে নির্ধারিত
করা হয়েছে। কিন্তু
বাংলাদেশে
(সরকারিভাবে
ও) বছরে একবার
রবিউস সানী ফাতেহা-ই-ইয়াজদহম
বহুকাল থেকেই উদযাপিত
হয়ে থাকে।
চারিত্রিক গুণাবলী :
হযরত আবদুল কাদের
জিলানী (র.)-এর
চারিত্রিক
গুণাবলী, ধর্মীয় আধ্যাত্মিক
ক্ষেত্রে
তার অবিস্মরণীয় অবদান
ইসলামের প্রচার-প্রসার
সমাজের উন্নয়ন-সংস্কার,
বেদাত-কুসংস্কার উচ্ছেদে
তার বৈপ্লবিক ভূমিকা
প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য দিক।
তার কারামত
বা অলৌকিক ক্ষমতার
অসংখ্য কাহিনীর কথা
জানা যায়। তার
অসংখ্য মূল্যবান ভাষণ-বাণী, গুরুত্বপূর্ণ
রচনাবলী, ফতোয়া প্রভৃতির
কথা বলে শেষ
করা যাবে না।
তিনি হাম্বলী মাজহাবের
অনুসারী হলেও মাজহাব
চতুষ্টয় অনুযায়ী ফতোয়া
প্রদান করতেন, যা
তার নিরপেক্ষ উদার
নীতিরই পরিচয় বহন
করে।
প্রসঙ্গক্রমে
এখানে বিস্ময়ের সাথে
একটি কথা বলতে
হচ্ছে যে, মহান
সাধক গাওসুল আজম
হযরত আবদুল কাদের
জীলানী (র.) সম্পর্কে
কোনো কোনো ভক্ত
লেখক এমন সব
আজগুবী উদ্ভট তথ্য
পরিবেশন করেছেন যা
নির্ভরযোগ্য
সূত্রে প্রমাণ করা
কঠিন। উদাহরণ স্বরূপ
এখানে আমরা এমন একটি
বিষয়ের উল্লেখ করতে
চাই যা তার
ব্যক্তি, পারিবারিক জীবনের
সাথে সম্পৃক্ত। বাংলা
ভাষায় রচিত তার
জীবন চরিত্র সংক্রান্ত
কোনো কোনো পুস্তকে
উল্লেখ করা হয়েছে
যে, চার স্ত্রী
হতে তার পুত্র
কন্যার সংখ্যা এত
অধিক ছিল যা
উল্লেখ করতে লজ্জিত
হতে হয়। তবে
বাগদাদ হতে প্রকাশিত
নির্ভরযোগ্য
আরবী পুস্তকে পুত্র
সংখ্যা ১২ এবং
কন্যা সংখ্যা ১
বলে উল্লেখ করা
হয়েছে। সঠিকভাবে যাচাই
অনুসন্ধান
না করে অলীক-অবিশ্বাস সংখ্যা
প্রদান করে বস্তুত
এই মহান সাধকের
প্রতি সম্মান প্রদর্শন
নয়, অবমাননা করারই
শামিল। আমরা যে
আরবী পুস্তকটির কথা
উল্লেখ করেছি
তার নাম জামেউল
ইমাম আল আজম।
এটির লেখক হযরত
ইমাম আজম আবু
হানিফা (র.)-এর
নামে প্রতিষ্ঠিত জামে
মসজিদ এর মসজিদের
প্রথম ইমাম শেখ
হাসেম আল আজমী
এবং জামে শেখ
আবদুল কাদের জীলানী
(র.)-এর সাবেক
খতীব। পুস্তকটি ইরাকে
ওয়াকফ ও ধর্ম
মন্ত্রণালয়
কর্তৃক ১৯৮০ সালে
প্রকাশিত।
এতে ইমাম আজম
ও গাওসুল আজমসহ
অনেক ইমাম-মাশায়েখ
এবং বিভিন্ন ধর্মীয়
নিদর্শন, কীর্তি ও
মসজিদের নিদর্শন স্থান
পেয়েছে। গাওসুল আজমের
সন্তানাদির
সংখ্যা উল্লেখ করা
হয়েছে। এইভাবে ‘ওয়াল্লাহ
ইসনা আশারা ওলাদান
ওয়া বিনতুন ওয়াহেদাহ’
অর্থাৎ তার ১২
পুত্র ও এক
কন্যা (পৃ.
১১৭)। আর
আমাদের দেশের অনির্ভরযোগ্য
কোনো কোনো বই-পুস্তকে পুত্র-কন্যার সমষ্টিগত
৪৯ থেকে ৮২
পর্যন্ত দেখানো হয়েছে,
কি বিস্ময়কর অলীক?
এই পুস্তকে এমন
একটি নতুন তথ্য
পরিবেশিত
হয়েছে, যা সঠিক
হলে হযরত গাওসুল
আজমের মহান বাবার
আপেলের ঘটনাটি বিতর্কিত
হয়ে পড়ে। আপেল
বাগানের মালিক হযরত
সৈয়দ আবদুল্লাহ সাওমায়ী
এবং গাওসুল আজমের
মহান বাবা শেখ
আবু সালেহ মুসার
মধ্যে বিনা অনুমতিতে
আপেল খাওয়া সংক্রান্ত
ঐতিহাসিক
ঘটনাটি অবিকল হযরত
ইমাম আজম আবু
হানিফা (র.)-এর
মহান বাবা সাবেত
আবু নোমান সম্পর্কে
বর্ণিত হয়েছে। উল্লেখিত
জামে ইমাম আজম
পুস্তকে ‘কিচ্ছাতুন লিল
ওয়ালেদ’ (বাবার কাহিনী)-শিরোনামে একই
ঘটনার উল্লেখ রয়েছে।
তবে এখানে বাগানের
মালিক আবদুল্লাহ সাওমায়ীর
নাম উল্লেখ করার
পরিবর্তে
‘শাহবুশ শাহারা’কে
গাছের মালিক বলা
হয়েছে এবং শাবেত
আবু নোমানের সাথে
আবদুল্লাহ
সাওমায়ীর
কন্যার বিবাহ পর্যন্ত এর
বিবরণ রয়েছে। অর্থাৎ
গাওসুল আজম ও
ইমাম আজমের দু’মহান বাবার
একই ঘটনার একটি
নতুন বিতর্কের সৃষ্টি
করেছে। ইমাম আজমের
বাবার এ কাহিনী
আলোচ্য পুস্তকের ১৯
ও ২৩ পৃষ্ঠায়
বর্ণিত হয়েছে। বস্তুত,
আপেলের ঘটনার বিবরণ
এক ও অভিন্ন
মনে হলেও মনে
হয় লেখক শেখ
হাশেম আজমী গাওসুল
আজমের বাবাকে ইমাম
আজমের বাবা মনে
করার ভ্রমে পতিত
হয়েছেন অথবা দুটি
ঘটনাই ভিন্ন ভিন্ন।
অথচ ইমাম আজমের
যুগ ৮০-১৫০
হিজরী পর্যন্ত। দুই
ইমাম বাবার সাথে
একই ঘটনা ঘটতেই
পারে না যুগের
এ কয়েক শতকের
বিশাল ব্যবধান তারই
অস্পষ্ট প্রমাণ। এতদ্ব্যতীত
হযরত ইমাম আজমের
জীবন চরিত্রের ওপর
রচিত বিভিন্ন ভাষায়
অসংখ্য গ্রন্থ-পুস্তকে
আপেলের উল্লেখিত ঘটনাটির
উল্লেখ আছে বলে
মনে হয় না।
আল্লামা শিবলী নোমানীর
মতো সূক্ষ্মবিদ গবেষক
লেখকও ঘটনাটি সম্পর্কে
কিছুই বলেননি। তার
ভাষ্যনুযায়ী,
সাবেতের জীবনবৃত্তান্ত অজ্ঞাত। বিভিন্ন
উপায়ে এতটুকু অবগত
হওয়া যায় যে,
তিনি বাণিজ্যের মাধ্যমে
জীবনযাপন
করতেন। চল্লিশ বছর
বয়সে আল্লাহ তাকে
সন্তান দান করেন।
বাবা-মা তার
নাম রাখেন নোমান।
পরবর্তীকালে
তিনি ইমাম আজম
উপাধি লাভ করেন।
(সীরাতুন নোমান)
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন
মানব জাতির হেদায়তের
জন্য যুগে যুগে
অসংখ্য নবী ও
রাসূল এ পৃথিবীতে
প্রেরণ করেছেন। আর
প্রিয় নবী হযরত
মুহাম্মদ
মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
মাধ্যমে এ ধারাবাহিকতার পরিসমাপ্তি
ঘটলেও হেদায়তের দ্বার
সদা উম্মোচিত ছিল,
কখনও বন্ধ হয়নি।
আওলাদে রাসূল, আউলিয়ায়ে
কেরাম ও সত্যিকার
নায়েবে রাসূল ওলামাগণ
কাল-কালান্তরে হেদায়তের
প্রজ্জ্বলিত
এ মশালকে সদা
অনির্বাণ
রাখার জন্য সচেষ্ট
ছিলেন এবং আছেন।
পাশাপাশি
মহান আল্লাহ্ এ
দ্বীনের সংস্কারের জন্য
প্রতি শতাব্দীতে একজন
করে মুজাদ্দিদ বা
দ্বীনের সংস্কারকও প্রেরণ
করে থাকেন, রাসূল-এ পাক
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ
করেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্
তা‘আলা এ
উম্মতের জন্য প্রতি
শতাব্দীর
শুরুতে এমন একজন
মহান ব্যক্তিকে প্রেরণ
করেন যিনি এ
দ্বীনের সংস্কার করবেন।
[তিরমিযী]
গাউসুল আযম আবু
মুহাম্মদ
মহিউদ্দিন,
শেখ সৈয়দ আবদুল
কাদের জিলানী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি কেবল দ্বীনের
সংস্কারক
ছিলেন না বরং
ইসলাম বা দ্বীনে
ইসলামের একজন পুনরুজ্জীবনকারীও
ছিলেন। তাই তিনি
‘মুহিউদ্দিন’
বা দ্বীনের পুনরুজ্জীবনকারী
হিসেবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।
হযরত গাউসে পাক
এ উপাধি সম্পর্কে
বলেন, ৫১১ হিজরিতে
জুমার দিন আমি
যখন সফর থেকে
বাগদাদে প্রবেশ করছিলাম
তখন খুবই দুর্বল,
অসুস্থ ও বিকৃত
চেহারার এক ব্যক্তির
পাশ দিয়ে গমন
করছিলাম এমন সময়
সে আমাকে ‘‘আস্সালামু
আলইকা, হে আবদুল
কাদের’ বলে সালাম
দিল, আমিও তার
সালামের উত্তর দিলাম।
তখন সে বলল,
আমাকে একটু উঠে
বসতে সাহায্য কর।
আমি যখন তাকে
বসানোর জন্য তার
গায়ে হাত দিলাম,
দেখলাম হঠাৎ সে
সম্পূর্ণরূপে
সুস্থ, সবল ও
সমুজ্জ্বল
চেহারা বিশিষ্ট ব্যক্তিতে
পরিণত হয়ে গেল,
এতে আমি বিচলিত
হয়ে গেলাম। তখন
সে আমাকে বলল,
ভয়ের কোন কারণ
নেই, মূলত
আমি আপনার প্রিয়
নবী হযরত মুহাম্মদ
মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র রেখে
যাওয়া যাওয়া দ্বীন-ইসলাম, যা
শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের
অপেক্ষা করছিল। আল্লাহ্
তা‘আলা আপনার
মাধ্যমে আমাকে নতুন
জীবন দান করেছেন,
তাই আজ থেকে
আপনি ‘মুহিউদ্দিন’ পরক্ষণে
আমি যখন বাগদাদের
জামে মসজিদের নিকটবর্তী
হলাম তখন এক
ব্যক্তি আমাকে ‘হে
হযরত মুহিউদ্দিন’ বলে
সম্বোধন করল। জুমার
নামাজ শেষে ‘হে
হযরত মুহিউদ্দীন’ ‘হে
হযরত মুহিউদ্দীন’ বলতে
বলতে দলে দলে
লোক এসে আমার
হাত চুম্বন করতে
লাগলো। অথচ এর
পূর্বে কেউ কখনও
আমাকে এ উপাধিতে
সম্বোধন করেনি। [বাহজাতুল
আসরার, কালায়েদুল জাওয়াহের
ও মাজহারী জামালে
মুস্তফায়ী]
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ
করেন, ‘‘প্রত্যেকে তাই
করবে যে জন্যে
তাকে সৃষ্টি করা
হয়েছে।’’[বুখারী]
‘‘যাকে যে
কাজের জন্য সৃষ্টি
করা হয়েছে তার
জন্য সে কাজকে
সহজ করে দেয়া
হয়েছে। [বুখারী]
বিভিন্ন মানুষকে নানা
ধরনের দায়িত্ব ও
কর্তব্য সম্পাদনের জন্য
সৃষ্টি করা হয়েছে।
আর হযরত গাউসে
পাককে সৃষ্টি করা
হয়েছে এ দ্বীনের
মহান খেদমত আনজাম
দেয়ার জন্যে, যা
তাঁর শৈশবকাল থেকেই,
বিশেষভাবে
লক্ষণীয় ছিল। তিনি
নিজেই বলছেন, আমি
ছোট বেলায় হাল-চাষ করার
জন্য যখন গরুর
পিঠে হাত রাখলাম
তখন গরুটি পিছন
ফিরে আমাকে বলল,
‘‘হে আবদুল কাদের
তোমাকে তো চাষাবাদ
করার জন্য সৃষ্টি
করা হয়নি।” তিনি
আরও বলেন, ‘‘যখন
আমি বাচ্চাদের সাথে
খেলতে চাইতাম তখন
অদৃশ্য থেকে কেউ
আমাকে ডেকে বললেন,
‘‘হে বরকতময়, আমার
দিকে এসো’’।
[ক্বালায়েদুল
জাওয়াহের]
জন্ম :
হযরত আবদুল কাদের
জিলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি জন্মগ্রহণ
করেন ১০৭৭ খ্রিস্টাব্দ
মুতাবিক ৪৭০ হিজরীর
রমযান মাসের ১
তারিখ সেহরির ওয়াক্তে
পারস্যের
কাম্পিায়ান
সাগরের দক্ষিণ উপকূলে
জিলান বা গীলান
অঞ্চলের নায়ক মহল্লায়
হযরত ইমাম হাসান
রাদ্বিয়াল্লাহু
আনহুর বংশধারায় এক
ঐতিহ্যবাহী
সৈয়দ পরিবারে। তাঁর আম্মা
সৈয়দা উম্মুল খায়ের
ফাতিমা রহমাতুল্লাহি আলায়হিও ছিলেন
হযরত ইমাম হুসাইন
রাদ্বিয়াল্লাহু
তা‘আলা আনহুর
বংশধারার
এক ঐতিহ্যবাহী সৈয়দ
পরিবারের
কন্যা।
শিক্ষা :
শৈশবেই আবদুল কাদির
জিলানী রহমাতুল্লাহি আলায়হি পিতৃহারা
হন। অতি শৈশবেই
তিনি কুরআন শরীফ
হিফজ করেন। বিভিন্ন
বর্ণনা মতে তিনি
মাতৃগর্ভে
থাকাকালেই
১৮ পারা কুরআন
শরীফ হিফজ থাকার
কারণে কুরআন মজীদ
কণ্ঠস্থ করে ফেলেন।
এটা প্রকাশ
পায় তখন যখন
৪ বছর বয়সে
তাঁকে আম্মাজান একজন
ক্বারীর কাছে কুরআন
মজীদ শিক্ষা গ্রহণের
জন্য পাঠান। কিন্তু
শিক্ষক ও আশপাশের
লোকজন যখন দেখলেন
যে, অতটুকু শিশু
বিসমিল্লাহির
রাহমানির
রাহীম বলার সাথে
সাথে একনাগাড়ে সূরা
ফাতিহা থেকে ১৮
পারা পর্যন্ত মুখস্থ
তিলাওয়াত
করছে তখন সবাই
বিস্ময়ে হতবাক হয়ে
গেলেন। এ খবর
চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে
বহু মানুষ তাঁকে
দেখবার জন্য ভিড়
করলেন এবং সবাই
বলাবলি করতে লাগলেন,
এ শিশু সাধারণ
কোন শিশু নয়,
নিশ্চয়ই এ শিশু
একজন মশহুর আল্লাহর
ওলী হবেন।
তিনি মায়ের কাছ
থেকে প্রাথমিক দ্বীনী
শিক্ষা গ্রহণ করে
জিলান নগরীর এক
মাদরাসায়
অধ্যয়ন করেন। তাঁর
আম্মা ছেলেকে উচ্চ
শিক্ষা গ্রহণের জন্য
বাগদাদ পাঠানোর সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করলেন। বাগদাদ
তখন মুসলিম খিলাফতের
রাজধানী।
বাগদাদের
‘নিযামিয়া
মাদরাসা’ ছিল তদানীন্তন
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়।
হযরত আবদুল কাদির
জিলানী রহমাতুল্লাহি আলায়হি পরবর্তীকালে
তাসাওউফের
সামগ্রিক
জ্ঞানে পারদর্শিতা অর্জন
করার স্বীকৃতিস্বরূপ সূফী হযরত
শায়খ আবূ সাঈদ
মুখররিমী
রহমাতুল্লাহি
আলায়হির কাছ থেকে
সনদপত্র বা খিলাফতনামা
প্রাপ্ত হন। ইতোমধ্যেই
শ্রেষ্ঠ আলিম হিসেবে,
শ্রেষ্ঠ সূফী হিসেবে,
শ্রেষ্ঠ ফকীহ হিসেবে
তাঁর নাম বিদ্যুৎ
বেগে ছড়িয়ে পড়ে
মুসলিম দুনিয়ায়। বহু
লোক তাঁর দরবারে
এসে ভিড় জমাতে
থাকে। লোকজনের ভিড়
দিনকে দিন বাড়তেই
লাগল।
তাঁর ওয়ায শোনার
জন্য সর্বস্তরের মানুষ
দলে দলে এসে
সমবেত হতো। তিনি
অতি দক্ষ বাগ্মী
ছিলেন। লোকজন তাঁর
মধুর বাণী এবং
সুমিষ্ট ওয়ায ঘন্টর
পর ঘন্টা মোহিত
হয়ে শুনত। তাঁর
ওয়াযে এমন এক
মোহনীয় শক্তি ছিল
যা শুনে সবাই
লাভবান হতো।
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
No comments