প্রশ্ন- ১৯৭ : ছেমা মাহফিল কি? বর্তমানে কি ছেমা জায়েজ?


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
প্রশ্ন- ১৯৭ : ছেমা মাহফিল কি? বর্তমানে কি ছেমা জায়েজ? কারণ এক বক্তার বক্তব্য ছিল এরকম গাউসে পাক, খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দী, খাজা গরিবে নেওয়াজ প্রমুখ অলিগণ ছেমা শুনতেন। আজ যারা ছেমার বিরোধিতার করছে তারা কি অতিরঞ্জিত করছে না? সবিস্তারে জানানোর অনুরোধ রইল।

উত্তর: ছেমা শব্দটি আরবী। অর্থ শোনা। বিভিন্ন সুরে সুরে আউলিয়ায়ে কেরামের শান মান আলোচনা করাকে ছেমা বলা হয়। ঢোল-তবলা ও হারমোনিয়াম বিভিন্ন বাদ্য বাজনাসহ গান-বাজনা আউলিয়া-ই-কিরামের শান-মান বর্ণনা করা না জায়েজ ও হারাম। যা হারাম হবার ক্ষেত্রে অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম ও আউলিয়া কেরামের উক্তি দ্বারা প্রমাণিত। অথিকাংশ ফকিহগণের মতে বাদ্যবাজনা সহ কাওয়ালী ইত্যাদি পরিবেশন করা হারাম হওয়া সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ নেই। বাদ্য বাজনা সহ ছেমা মাহফিল কাওয়ালী চিশতিয়া তরিকায় বৈধ মর্মে যে বর্ণনা করা হয় তা বানোয়াট ও অপবাদমাত্র। চিশতিয়া তরিকার অন্যতম বুজর্গ হযরত নিজামুদ্দিন মাহবুবে ঐলাহী (রা:) এর ছাত্র ও খলিফা হযরত মাওলানা ফখরুদ্দিন যাররাভী (রা:) আপন মুর্শিদের নির্দেশে লিখিত সামা বিষয়ক “কাশফুল ফানা আন উসুলিম সামা” গ্রন্থে লিখেছেন যে, আমাদের তরিকার মাশাইখদের সামা বাদ্যযন্ত্রের অপবাদ থেকে মুক্ত ছিল”। স্বয়ং নিযামুদ্দিন মাহবুবে এলাহী গ্রন্থে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বিখ্যাত ফিকহ দুররে মোখতারের ৫ম খন্ডে উল্লেখ্য আছে যে,

অর্থাৎ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন গান-বাজনার শব্দ অন্তরে ঐভাবে কপটতা জন্ম দেয় যেমনিভাবে পানি উদ্ভিদকে জন্ম দেয়। ফতোয়ায়ে বায়য়াযিয়ায় উল্লেখ আছে অনর্থক লেখ- তামাশায় শব্দ শ্রবণ করা যেমন কাট বাজানো বা অন্য কিছু বাজানো হারাম। কারণ হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন খেল-তামাশা শ্রবণ করা নাফরমানী, তাতে বসা ফাসেকী, উপভোগ করা কুফরী। হাতে গোনা কিছু ওলামা ছেমাকে জায়েজ বলে ফতোয়া দিলেও অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম যেমত দিয়েছেন তা গ্রহণ করা নিরাপদ। তাছাড়া যারা ছেমাকে বৈধতা দিয়েছেন তাঁরা সেখানে কিছু শর্তারোপ করেছেন। বর্তমানে সেসবশর্ত তোয়াক্কা নাকরে ছেমার নামে বিভিন্ন অশ্লিল ঢং তামাশা করে শানে আউলিয়া বয়ান করা তাদের শানে বেয়াদবী করার শামিল। সুতরাং এ ব্যাপারে সকল ঈমানদার হক্কানী ওলী প্রেমিক সুন্নীদের সতর্ক দৃষ্টি রাখা নেহায়ত জরুরী।

প্রকাশিত: 
মাসিক আর-রায়হান 
৩য় বর্ষ, ২৮ সংখ্যা, রবিউল সানি ১৪৩৮ হিজরী,
জানুয়ারী ২০১৭ ইং, মাঘ-১৪২৩ বঙ্গাব্দ।


No comments

Powered by Blogger.