হযরত স্যৈায়াদনা আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু
প্রথম খলিফা আমিরুল মুমিনীন হজরত আবু বকর সিদ্দিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. মহানবী সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রথম খলিফা ছিলেন। তিনি জাহেরী ও বাতেনী এলেম রসূল স. এর। নিকট থেকেই গ্রহণ করেন। হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. এর বংশপরম্পরা মহানবী স. এর সাথে মিলিত হয়েছে মুররা ইবনে কাব পর্যন্ত গিয়ে।
বংশপরম্পরা নিম্নরূপঃ
১. হজরত আবু বকর বিন আবু কুহাফা বিন ওসমান বিন আমের বিন কাব বিন সাদ বিন তাঈম বিন মুররা। তাঁর মাতার নাম সালমা উপনাম। উম্মুল খায়র বিনতে সখর বিন আমর। জন্ম— হাতীর বৎসর থেকে দুই বছর চার মাস থেকে কয়েক দিন কম। রসূলুল্লাহ স. এরশাদ করেন—
(আল্লাহতায়ালা আমার বক্ষে যা প্রক্ষেপ করেছেন, আমি তা আবু বকরের বক্ষে ঢেলে দিয়েছি)।
হাদিসটি হাকেম তাঁর ‘মুসতাদরাক’ নামক গ্রন্থে হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন।
২. হজরত মােহাম্মদ স. বিন আবদুল্লাহ বিন আবদুল মুতালিব বিন হিসাম বিন আবদে মানাফ বিন কুসায়ী বিন কিলাব বিন মুররা।
রসূল স.তাঁর জীবনসায়াহ্নে এক ভাষণে বলেন
মহাপরাক্রমাধিকারী আল্লাহ তােমাদের সাথীকে খলিল-হাবীব নির্বাচিত করেছেন। আমি যদি আমার প্রভুপালক ব্যতীত অন্য কাউকে বন্ধু বানাতাম তাহলে আবু বকরকে বানাতাম। কিন্তু তিনি আমার দ্বীনের সাথী । আমি তাকে আমার গুহার (গারে সওর) সাথী নির্বাচন করেছি এবং তিনি আমার উম্মতের খলিফা। হাদিসটি বিভিন্ন সনদে মুহাদ্দিসগণ বর্ণনা করেছেন। ইমাম বােখারী ও মুসলিম হজরত আবু সাঈদ খুদরী রা., জুবাইর ইবনে। আওয়াম রা. ও ইবনে আব্বাস রা. থেকে। ইমাম তিরমিজি হজরত ইবনে ওমর রা. থেকে। ইমাম আহমদ হজরত যােবায়ের থেকে। আর সামান্য পরিবর্তন করে বর্ণনা করেছেন আবু ইয়ালা। মেশকাত ও তরিখুল খুলাফায়। এর সমর্থনে হাদিস পাওয়া যায়।
অন্যত্র তিনি এরশাদ করেন—
নিশ্চয় মহাশক্তিধর আল্লাহ্ ইব্রাহীমকে খলিল এবং মূসাকে নাজী এবং আমাকে হাবীব নির্বাচিত করেছেন। অতঃপর আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, আমার ইজ্জত ও জালালের শপথ! নিশ্চয়ই আমার হাবীবকে খলিল ও নাজীর উপর প্রধান্য দিবাে। হাদিসটি হাকেম তিরমিজিতে এবং তিবরানী কাবীরে উল্লেখ করেছেন। দায়লামী এবং ইবনে আসাকের হজরত আবু । হােরায়রা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন। ইমাম সুয়ূতী র. এর ‘তা’কিবাতের ‘মানাকিব’ অধ্যায়ে হাদিসটি বিদ্যমান।
জ্ঞানী ও গবেষকগণ এই দুই হাদিসের ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে— খুল্লাত তথা বন্ধুত্বের মাকাম দুটি— ১. প্রেমিকত্বের শেষ সীমানা। এ মাকামই দ্বিতীয় হাদিসের উদ্দেশ্য। ২. প্রেমাস্পদত্বের শেষ সীমানা। প্রথম হাদিসে এই মাকামের কথাই বলা হয়েছে, যে মাকামে রসূল স. এর সাথে আর কেউ শরীক নেই। এই মাকামই মাকামে মাহমুদ। এখানে এই। মাকামেরই সর্বশেষ সীমার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
রসূল স. এরশাদ করেন, কেউ আমার এই বিশেষ মাকামে শরীক হলে আবু বকরই শরীক হতাে। হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. এলমে বাতেন ও বিশেষ জ্ঞানের কারণে এ উম্মতের ওলীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আলেম। নবীগণের পর সকল সিদ্দিকগণের মধ্যে তিনিই শ্রেষ্ঠ ও পরিপূর্ণ। মনীষীগণ এ ব্যাপারে একমত।
রসূল স. এরশাদ করেন-
(আল্লাহর শপথ! নবী-রসূলগণের পর আবু বকর ব্যতীত কোনাে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির উপর সূর্য উদিত ও অস্তমিত হয়নি)।
রসূল স. আরও বলেন, আমি আবু বকরকে তােমাদের চেয়ে উত্তম জানি তার নামাজ রােজার কারণে নয় বরং ওই বস্তুর কারণে যা তার বক্ষে বিদ্যমান।
আমাদের খাজা সাহেব লিখেছেন, হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. এর সুলুক (পরিভ্রমণ) ঊধ্বজগতের সুলুকের সাথে সম্পৃক্ত। হজরত আলী রা.ও এর সাথে সম্পৃক্ত। এই সূক্ষ্ম বিষয়টি তিনি তাঁর নিজস্ব ভাষায় ব্যক্ত করেছেন, তােমরা আমাকে আকাশের রাস্তা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করাে, কেনােনা আমি পৃথিবীর রাস্তার তুলনায় আকাশের রাস্তা সম্পর্কে অধিক। অবগত। এই সুলুক বা পরিভ্রমণ ঊধ্বজগতের পরিভ্রমণের সাথে সংশ্লিষ্ট অর্থাৎ সায়েরে আনফুসী তথা আত্মিক পরিভ্রমণের সাথে। এ সুলুকের উপমা হলে জযবার (প্রেমাকর্ষণের ) গৃহ ভেদ করে অদৃশ্যের যাত পর্যন্ত রাস্তা তৈরী করা। এ পথেই সম্মুখে অগ্রসর হতে হয়। মহানবী স. এ রাস্তা দিয়েই সর্বশীর্ষ মাকামে স্থিত হয়েছিলেন। উঁচু স্তরের সুলুক যা সায়েরে আফাকীর সাথে সংশ্লিষ্ট তা মহানবী স. থেকে উৎসারিত। আর এ পথটি হজরত আলী রা. এর সাথে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত। অবশিষ্ট তিন খলিফা অন্য পথে আলেমুল গায়েব তথা অদৃশ্য সত্তা পর্যন্ত পৌঁছেছেন। হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. এর সুলুকের (পরিভ্রমণের ) পথ পূর্বেই জানানাে হয়েছে। হজরত ফারুকে আজম এবং হজরত ওসমান জুননুরাইনের সুলুকের পথ। ভিন্ন ভিন্ন। সালেকগণ এ চার পথেই গন্তব্যস্থলে উপনীত হয়ে থাকেন। আর হজরত আলী রা. এর সুলুকের (পরিভ্রমণের) পথ তাে সুপ্রসিদ্ধ। অধিকাংশ সালেক এ পথেই গন্তব্যস্থলে উপনীত হয়েছেন। নকশবন্দী বুজর্গগণের সিলসিলা বিশেষভাবে হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. এর সাথে সম্পৃক্ত। অন্যান্য তরিকার মাশায়েখগণও সিদ্দিকিয়া তরিকায় রাস্তা অতিক্রম করে সফল হয়েছেন।
এ ফকির (গ্রন্থকার) কিছুসংখ্যক মাশায়েখকে এমন দেখেছেন, যারা ফারুকে আজমের পরিভ্রমণের পথে পরিভ্রমণ করেছেন। হজরত গাউসে আজম আবদুল কাদের জিলানী র. এ পথেই আল্লাহ্ পর্যন্ত পৌঁছেছেন। হজরত আলী রা. এর তরিকায় বেলায়েতের প্রথম স্তর ফানা-বাকা স্তরে তিনি অনেক উন্নীত হয়েছেন। হজরত আবু সাঈদ কুদ্দিসা সিররুহু ফারুকে আজমের পরিভ্রমণের পথে পথ অতিক্রম করেছেন। পাঠক জ্ঞাত আছেন যে, রসূল স. হজরত ওমর ফারুক রা. সম্পর্কে বলেন—
(আমার পর নবী হলে ওমরই নবী হতাে)। এ কথায় স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, তার মধ্যে নবুয়তের পূর্ণতার গুণাবলী বিদ্যমান ছিলাে। হাদিসটি তিরমিজি, আহমদ, আবু ইয়ালা, তিবরানী, বায়হাকী, হাকেম, আবু নাঈম। হজরত উকবা বিন আমের রা. থেকে বর্ণনা করেছেন।
হজরত মালেক ইবনে উবায়দা রা. বলেন, রসূল স. এর অন্তিম অসুস্থতার সময় এরশাদ করেন, নামাজের ওয়াক্ত হয়েছে কি? উপস্থিতজনেরা বললেন, হ্যা, নামাজের সময় হয়েছে। তিনি বললেন, বেলালকে আজান দিতে বললা এবং আবু বকরকে ইমামতি করতে বলাে। একথা বলার পর তিনি স. হুঁশ হারিয়ে ফেলেন। দ্বিতীয় বার হুঁশ ফিরে এলে তিনি স. বললেন, বেলালকে বলাে আজান দিতে, আর আবু বকরকে ইমামতি করতে। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা, আরজ করলেন, হে আল্লাহর রসূল স.! আমার পিতা কোমল হৃদয়ের মানুষ। ইমামতি করলে আপনার। স্থানে তাকে দাঁড়াতে হবে। তিনি শঙ্কিত ও বিচলিত হয়ে পড়বেন। সহ্য করতে পারবেন না। আপনি অনুগ্রহ করে অন্য কাউকে আদেশ করুন।
রসূল স. পুনরায় জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। জ্ঞান ফিরলে বললেন, বেলালকে বলাে আজান দিতে আর আবু বকরকে ইমামতি করতে। তােমরা নবী। ইউসুফের যুগের নারীদের মতাে, যারা তাঁকে বিপদে ফেলেছিলাে। হজরত আয়েশা রা. বলেন, লােকজন বেলালকে বললে তিনি আজান দিলেন। আবু বকর ইমামতির জন্য সামনে অগ্রসর হলেন। নামাজ শুরু হয়ে গেলাে । অতঃপর রসূল স. কিছুটা সুস্থতা অনুভব করলেন। তিনি বললেন, এমন কাউকে ডাকো যার উপর ভর দিয়ে আমি মসজিদে যেতে পারি। হজরত বারিদা রা. এবং অন্য একজন সাহাবী এলেন। তিনি স, তাদের উপর ভর দিয়ে মসজিদে উপস্থিত হলেন। হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. রসূল স. এর মহান উপস্থিতি টের পেয়ে পিছনে সরতে চাইলেন। তিনি স. বললেন, আপন স্থানে স্থির থাকো।
ইমাম বােখারী, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসায়ী ও ইবনে মাজা হাদিসটি সামান্য শাব্দিক পার্থক্যের সাথে হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণনা। করেন।
সহীহ্ মুসলিম শরীফে এসেছে, রসূল স. হজরত আয়েশা সিদ্দিকাকে বললেন, তুমি তােমার পিতা ও ভাইকে ডাকো। আমি একটি ওসিয়তনামা লিখে দিবাে। কেনােনা আমার আশংকা, কোনাে আকাঙ্ক্ষাকারী (খেলাফতের) দাবি করতে পারে। আল্লাহ্তায়ালা এবং আমি ও মুমিনগণ আবু বকররের খেলাফত ছাড়া অন্য কারাে খেলাফতে খুশি নয়। মুসলিম।
এরপর রসূল স. ইন্তেকাল করেন। হজরত ওমর রা. উন্মুক্ত তরবারি হাতে নিয়ে বললেন, যে বলবে রসূল স. ইন্তেকাল করেছেন, আমি তার শিরচ্ছেদ করবাে। এই হাদিসের শেষে রয়েছে, এরপর হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. এলেন। রসূল স. এর পবিত্র ললাটে চুমু খেলেন এবং তাঁর স. এর মহান পবিত্র দেহে হাত রেখে পাঠ করলেন—
(তুমি তাে মরণশীল এবং উহারাও মরণশীল। সূরা যুমার আয়াত ৩০)।
তাঁর মুখে এই আয়াতের আবৃত্তি শুনে সকলে বুঝতে পারলেন, রসূল স, এই নশ্বর জগত থেকে বিদায় নিয়েছেন।
অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. রসূল স. এর নিকট থেকে বাইরে এলেন এবং এই আয়াত তেলাওয়াত করলেন—
(মােহাম্মদ একজন রসূল মাত্র । তাহার পূর্বে বহু রসূল গত হইয়াছে। সুতরাং যদি সে মারা যায় অথবা সে নিহত হয় তবে কি তােমরা পৃষ্ঠ পদর্শন করিবে? সূরা আলে ইমরান আয়াত ১৪৪)।
সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হে রসূলের হিজরতের সফরসঙ্গী! আপনি কি রসূল স. এর নামাজে জানাজা আদায় করবেন? সিদ্দিকে আকবর রা. বললেন, হ্যা। একদল এসে তাকবীর বলে নামাজ পড়বে এবং দোয়া করে চলে যাবে। এরপর আরেক দল এসে নামাজ পড়ে চলে যাবে।।
হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. আদেশ করলেন, রসূল স.কে হজরত আব্বাস, আলী এবং হজরত আব্বাসের ছেলে ফজল এবং কুছাম, উসামা বিন যায়েদ ও সালেহ হাবশী গােসল দিবে।
মুহাজিরগণ খেলাফতের বিষয়ে আনসারদের সমাবেশে উপস্থিত হলেন। আনসারগণ বললেন, আমাদের পক্ষ থেকে একজন আমীর হবেন আর তােমাদের পক্ষ থেকে একজন। হজরত ফারুকে আজম বললেন, সে। কোন্ ব্যক্তি যার গুণাবলীতে নিম্নের তিনটি কালিমা রয়েছে—
(সে ছিল দুইজনের দ্বিতীয়জন। যখন তাহারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল, সে তখন তাহার সংগীকে বলিয়াছিল বিষন্ন হইও না, আল্লাহ্ তাে আমাদের। সংগে আছেন। সুরা তওবা আয়াত ৪০)।
এরপর হজরত ওমর রা. বললেন, হে আবু বকর! আপনার হাত বাড়িয়ে দিন। হজরত আবু বকর রা. হাত বাড়িয়ে দিলেন। হজরত ওমর। রা. সর্বপ্রথম বায়াত গ্রহণ করলেন। তারপর সকল সহাবী সন্তুষ্টচিত্তে বায়াত গ্রহণ করলেন। (তারিখে ইমাম আল ইফায়ী)।
হজরত সিদ্দিকে আকবর রা. এর মর্যাদা বর্ণনার ক্ষেত্রে রসূল স. বলেন, যখন আল্লাহতায়ালা আমাকে নবী করে প্রেরণ করেছিলেন, তখন তােমরা আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিলে। আর আবু বকর বলেছিলাে, আপনি সত্য বলেছেন। সে তার জান-মাল দিয়ে আমাকে সাহায্য করেছে। তােমরা কি আমার কারণে আমার বন্ধুকে বর্জন করবে?
ইমাম আল ইফায়ী বলেন, হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. এর ইমানের পরিপূর্ণতা ও পূর্ণ বিশ্বস্ততার এটা সর্বোচ্চ স্বীকৃতি।
রসূল স. এরশাদ করেন, আবু বকরের ইমানের সাথে যদি তামাম জিন ইনসানের ইমান ওজন করা হয়, তাহলে আবু বকরের ইমান ভারি হবে, নবী-রসূলগণ ব্যতীত।
হাদিসটি ইমাম বায়হাকী তাঁর ‘শাে’বুল ইমানে’ হজরত ওমর রা. থেকে পরিণত সূত্রে বর্ণনা করেছেন এভাবে
(যদি হজরত আবু বকরের ইমান পৃথিবীবাসীর ইমানের সাথে মাপা হয়, তাহলে তাঁর ইমানই প্রাধান্য পাবে)। তারিখে খুলাফা ৪৪ পৃষ্ঠা।
একবার সাহাবায়ে কেরাম রা. রসূল স.কে জিজ্ঞেস করলেন, হে প্রত্যাদেশিত পুরুষ! আপনার প্রিয় ব্যক্তি কে? উত্তরে তিনি বললেন, আয়েশা। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, পুরুষদের মধ্যে কে? তিনি স. বললেন, তার পিতা আবু বকর । বােখারী, মুসলিম।
রসূল স. এরশাদ করেন, মসজিদে আবু বকরের জানালা ছাড়া সকল জানালা বন্ধ করে দাও। মেশকাত।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেছেন, রসূল স. এর যুগে আমরা হজরত আবু বকরের সমতুল্য কাউকে মনে করতাম না। এরপর হজরত ওমর, তারপর হজরত ওসমান । মেশকাত।
বিশুদ্ধ হাদিসগ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে, একদিন রসূল স. জিজ্ঞেস করলেন, কে আছাে যে আজ রােজা রেখেছাে? হজরত আবু বকর রা. বললেন, আমি । রসূল স. বললেন, কে আছাে যে আজ জানাযায় অংশগ্রহণ করেছাে? হজরত আবু বকর রা. বললেন, আমি । রসূল স. বললেন, কে আছাে যে আজ মিসকিনদেরকে আহার করিয়ে পরিতৃপ্ত করেছাে? হজরত আবু বকর বললেন, আমি । রসূল স. পুনঃ প্রশ্ন করলেন, কে আছাে এমন যে আজ রুগ্ন ব্যক্তির খোঁজ-খবর নিয়েছাে? হজরত আবু বকর বললেন,
আমি। এরপর রসূল স. বললেন, এ সকল কাজ যার মধ্যে একত্রিত হয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। মুসলিম।
উলামা কেরাম বলেন, এর অর্থ হলাে ওই ব্যক্তি হিশাব এবং আমলের শাস্তি ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করবে। কেনােনা শুধু ইমান আনয়ন করাই আল্লাহর করুণাতে জান্নাত পাওয়ার জন্য যথেষ্ট। |
তিরমিজি বর্ণিত একটি হাদিসে রয়েছে, আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে দয়াবান মেহেরবান আবু বকর। আমি যার কাছেই ইসলামের দাওয়াত দিয়েছি, সে সামান্য সময়ের জন্য হলেও ইতস্তত করেছে। ব্যতিক্রম শুধু আবু বকর। তিরমিজি, তিবরানী, ইবনে আসাকির। |
হজরত আবু বকর যখন তাঁর সমস্ত ধন-দৌলত রসূল স. এর খেদমতে উপস্থিত করলেন, তখন তিনি স. জিজ্ঞেস করলেন, পরিবার-পরিজনের। জন্য কী রেখে এসেছাে? হজরত আবু বকর রা. উত্তর দিলেন, আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূলকে। তিরমিজি, আবু দাউদ।
রসূল স. বলেন, আকাশ ভ্রমণকালে আমি যখন যে আকাশ দিয়েই গমন করেছি, সেখানে আমার নাম মােহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্ লিখিত দেখেছি। আর আবু বকর ছিলাে আমার পশ্চাতে। আস্ সাওয়াইকুল মুহাররিকা ৭২ পৃষ্ঠা ।
রসূলুল্লাহ স. এরশাদ করেন, কিয়ামত দিবসে আবু বকর ব্যতীত সকলকে দাঁড়াতে নির্দেশ দেওয়া হবে। আবু বকর ইচ্ছা করলে দাঁড়াবে অথবা চলে যাবে। আমলনামা দেওয়ার সময় তাকে বলা হবে, ইচ্ছা হলে। পড়াে অথবা পােড়াে না। ঊধ্বজগতে লাল ইয়াকুতের একটি গম্বুজ থাকবে যাতে চার হাজার দরজা থাকবে। হজরত আবু বকর যখন আল্লাহতায়ালার। সাথে দীদারের ইচ্ছা প্রকাশ করবেন, তখন তা থেকে একটি দরজা খুলে যাবে। তিনি কোনাে প্রকার প্রতিবন্ধকতা ব্যতীতই আল্লাহর দীদার লাভ করবেন।
রসূল স. এরশাদ করেন, একদিন আমি হজরত জিব্রাইলকে জিজ্ঞেস করলাম, কিয়ামত দিবসে আমার উম্মতের হিশাব হবে কি? তিনি বললেন, হঁা, তবে হজরত আবু বকর ব্যতীত। তাঁকে বলা হবে, আবু বকর! জান্নাতে চলে যাও। তিনি বলবেন, আমি ততােক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবাে না যতােক্ষণ না আমার সাথে মহব্বত স্থাপনকারীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে । আল্লাহ্ রব্বল আলামীন বলবেন, হে আবু বকর! তােমার বন্ধুদেরকে বেহেশতে নিয়ে যাও। কেনােনা আমি ওই দিন ওয়াদা করেছিলাম, যে দিন তােমাকে পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছি। আর আমি বেহেশতকে বলে দিয়েছি যে আবু বকরকে ভালােবাসবে, সে তােমাতে প্রবেশ করবে।
রসূল স. বলেন, যে দিন আবু বকর জন্মগ্রহণ করলাে, সেদিন। আল্লাহতায়ালা জান্নাতে আদনকে জানিয়ে দিলেন, আমার সম্মান ও মর্যাদার শপথ! তােমাতে তাকেই প্রবেশ করাবাে যারা এই শিশুকে ভালােবাসবে। আল লায়লীল মাসনুআ, পৃষ্ঠা ২৯২, ২৯৩।
একবার রসূল স. হজরত আয়েশা সিদ্দিকাকে বললেন, আমি কি তােমাকে একটি খবর দিবাে? তিনি বললেন, অবশ্যই। রসূল স. বললেন, তােমার পিতার নাম সূর্যের অন্তরে লিপিবদ্ধ আছে। প্রতিদিন সূর্য কাবার মুখােমুখী হলে কাবার উপর দিয়ে অতিক্রম করা থেকে বিরত থাকে। সূর্যের সাথে নিয়ােজিত ফেরেশতা বলে, ওই পবিত্র নামের বরকতে অতিক্রম করাে যা তােমার মধ্যে রয়েছে। অতঃপর সূর্য অতিক্রম করে। কুররাতুল আইনাইন পৃষ্ঠা ১৩।
একদিন রসূল স. সাহাবায়ে কেরাম রা.কে সম্বােধন করে বললেন, আমি তােমাদেরকে কিয়ামতের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করব কি? কিয়ামত দিবসে পুলসিরাতের ডানে একটি মিম্বর স্থাপন করা হবে। আমি তাতে উপবেশন করবাে। অতঃপর আর একটি মিম্বার স্থাপন করা হবে তাতে উপবেশন করবেন হজরত ইব্রাহীম। উভয় মিম্বারের মাঝে একটি আসন। রাখা হবে। তাতে উপবেশন করবে আবু বকর ।।
অতঃপর একজন ফেরেশতা আমার মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে উঠে। ঘােষণা করবেন, হে মুসলিম জনতা! যে আমাকে চিনে তাে চিনেই আর যে চিনে না সে জেনে নিক আমি জাহান্নামের দারােগা ফেরেশতা। আল্লাহতায়ালা আমাকে আদেশ করেছেন আমি যেনাে জাহান্নামের চাবি মােহাম্মদ স. এর হাতে অর্পণ করি। আর মােহাম্মদ স. আদেশ করবেন। আমি যেনাে সেই চাবি আবু বকর সিদ্দিককে দেই। অতঃপর আরেকজন ফেরেশতা এসে আমার মিম্বরের দ্বিতীয় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ঘােষণা দিবেন, হে মুসলিম জনতা! যারা আমাকে চিনে তারাতাে চিনেই, আর যারা চিনে না তারা জেনে নিক আমি জান্নাতের প্রধান ফেরেশতা রিদ্বওয়ান। আল্লাহতায়ালা আমাকে আদেশ করেছেন, আমি যেনাে বেহেশতের চাবি মােহাম্মদ স. এর হস্তে ন্যস্ত করি। আর তিনি স. আদেশ করেছেন, চাবিটি
হজরত আবু বকরকে দেওয়ার জন্য। অতঃপর আল্লাহতায়ালা আমাদের। উপর নূরের তাজাল্লি বিকশিত করে এরশাদ করবেন, বরকতময় হােক। আমার খলিল, আমার হাবীব ও সিদ্দিকে আকবর।
একবার রসূল স. বললেন, হে আবু বকর! আল্লাহতায়ালা তােমাকে। মহাসন্তুষ্টি দান করবেন। হজরত আবু বকর সিদ্দিক বললেন, মহাসন্তুষ্টি কী? রসূল স. বললেন, মহান আল্লাহতায়ালা মুসলমানদেরকে সাধারণ তাজাল্লি দিবেন। আর তােমার জন্য রয়েছে বিশেষ তাজাল্লি। কুররাতুল আইনাইন। পৃষ্ঠা ১৩।
বর্ণিত আছে, একদা আবু বকর সিদ্দিক রা. আশি হাজার দিনার ও নিজের মালিকানাধীন সকল কিছু আল্লাহর রাস্তায় দান করলেন এবং নিজে। ফকিরী অবলম্বন করলেন। কম্বল পরিধান করে বােতামের অভাবে কাঁটা লাগিয়ে রসূল স. এর দরবারে উপস্থিত হলেন। রসূল স. জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু বকর! এ কী অবস্থা! হজরত আবু বকর উত্তর দেওয়ার পূর্বেই হজরত জিব্রাইল আ. হজরত আবু বকরের মতাে কম্বল পরিধান করে কাটা লাগাতে লাগাতে রসূল স. এর নিকট পৌছে গেলেন। এ অবস্থা দেখে রসূল স, আশ্চর্যান্বিত হলেন। বললেন, ভাই জিবরাইল! এ পােশাক কেনাে? তিনি বললেন, সিদ্দিকে আকবরের সঙ্গে সামঞ্জস্যতার জন্য। নৈকট্যধন্য ফেরেশতাদেরকে আজ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেনাে আবু বকরের মতাে পােশাক পরিধান করে। আল্লাহতায়ালা আমাকে আপনার নিকট প্রেরণ করেছেন এজন্য যে, আপনি যেনাে আবু বকরকে আল্লাহ্র সালাম পৌছে দেন। তাঁকে বলে দিন এই ফকিরী হালের মধ্যেও তিনি যেনাে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন। রসূল স. আল্লাহর সালাম ও পয়গাম বাণী হজরত আবু বকরের নিকট পৌছে দিলেন। হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. খুশিতে বলে উঠলেন, আল্লাহু আকবর। তারপর তিনবার বললেন, আমি আমার প্রভুপালকের প্রতি সন্তুষ্ট। রসূল স. হজরত আবু বকর রা.কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু বকর! তুমি কী এমন আমল করেছাে যে, আল্লাহতায়ালা তােমাকে সালাম প্রেরণ করেছেন। হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. এর জবাবের পূর্বেই হজরত জিবরাইল আ. বললেন, আপনার হয়তাে জানা নেই, তিনি তার সকল সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেছেন। সাতজন মুসলমান, যাদেরকে কাফেরেরা জুলুম ও অত্যাচারের নিশানা বানিয়েছিলাে, হজরত আবু বকর তাদেরকে দশগুণ অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে ক্রয় করে মুক্তি দিয়েছিলেন। তারা হচ্ছেন বেলাল, আমের, নাহদিয়া, নাহদিয়ার কন্যা মারিয়াহ, দুবায়রা, উম্মে উবায়দা ও কানি। এমন সময় হজরত জিব্রাইল সূরা লাইল নিয়ে অবতরণ করেন, যেখানে বলা
হলাে-
(সুতরাং কেহ দান করিলে, মুত্তাকী হইলে এবং যাহা উত্তম তাহা সত্য বলিয়া গ্রহণ করিলে, আমি তাহার জন্য সুগম করিয়া দিবাে সহজ পথ। সূরা লাইল ৫-৭)।
ইমাম জাফর সাদেক এ আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন অর্থ আল্লাহ্ যাকে উভয়জগত দান করেছেন অথবা যিনি আল্লাহ্ ব্যতীত উভয়জগতের কোনাে বিষয়েই মনােনিবদ্ধ করেন না। অর্থ যিনি অনর্থক কাজ ও গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকেন। অর্থ যিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্যলাভ কামনা করেন এবং এই উদ্দেশ্যের উপর কায়েম থাকেন। যখন তিনি এই আয়াতে পৌছলেন—
(এবং তাহার প্রতি কাহারও অনুগ্রহের প্রতিদানে নহে, কেবল তাহার মহান প্রভুপালকের সন্তুষ্টির প্রত্যাশায়, সে তাে অচিরেই সন্তোষ লাভ করিবে । সূরা লাইল আয়াত ১৯-২১)। রসূল স. বললেন, আবু বকর তাদেরকে এ জন্য মুক্ত করেনি যে, কেউ তাকে বিনিময় প্রদান করবে, বরং সে এই নিয়তে আমল করেছে যে, আল্লাহতায়ালা যেনাে দয়া করে সন্তুষ্ট হয়ে যান। আর সঙ্কর্মটি যেনাে অতি দ্রুত আল্লাহর দরবারে পৌছে যায়। রসূল স. একদিন তার জন্য দোয়া করলেন- হে আল্লাহ্! কিয়ামত দিবসে আবু বকরকে আমার সাথে আমার স্তরে রেখাে। ওহী অবতীর্ণ হলােআল্লাহ্ আপনার দোয়া কবুল করেছেন।
রসূল স. বলেন, প্রত্যেকের অনুদান আমি পরিশােধ করে দিয়েছি। কিন্তু আবু বকরের অনুদান আমার কাছে রয়ে গেছে, যার বিনিময় আল্লাহতায়ালা তাকে দিবেন । তিরমিজি ও কুররাতুল আইনাইন ১১ পৃষ্ঠা ।।
রসূল স. আরও বলেন, কারাে মাল দ্বারা আমি এতাে উপকার লাভ করিনি, যতােখানি আবু বকরের মাল দ্বারা উপকৃত হয়েছি। আমি যদি আল্লাহ্ ছাড়া কাউকে বন্ধু বানাতাম, তাহলে আবু বকরকে বানাতাম। হাদিসটি শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী র. তাঁর রচিত কিতাব কুররাতুল আইনাইন’ এর ১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন।
সিদ্দিক বর্ণিত আছে যে, রসূল স. কে যখন হিজরতের আদেশ দেওয়া হলাে তখন তিনি হজরত জিব্রাইলকে বললেন, আমার সাথে কে হিজরত করবে? তিনি বললেন, সিদ্দিকে আকবর। সেই দিনই আল্লাহতায়ালা তাকে সিদ্দিক নামে ভূষিত করেন।।
আতিক— তাঁর আতিক নামের ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মতানৈক্য রয়েছে। কতিপয় আলেম বলেন, তাঁর আতিক নামের কারণ এরকম— তার মর্যাদার ব্যাপারে রসূল স. বলেন, কেউ যদি দোযখ থেকে মুক্ত কোনাে ব্যক্তিকে দেখতে চায়, সে যেনাে আবু বকর ইবনে আবু কুহাফাকে দেখে। নেয়। এটাই আতিক নামের কারণ। উল্লেখ্য, আতিক অর্থ দোযখবিমুক্ত। অন্যান্য আলেম বলেন, তাঁর সুন্দর দৌহিক সৌন্দর্যের জন্যই তাঁকে আতিক উপাধি দেওয়া হয়েছে।
বর্ণিত আছে যে, তিনি যে দিন খেলাফতের মঞ্চে উপবিষ্ট হলেন, সেদিন বিশিষ্ট মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণ স্বেচ্ছায় ও সন্তুষ্টচিত্তে বায়াত হলেন। শ্রেষ্ঠ সাহাবীগণ আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা দেখাতে একে অপরের অগ্রগামী হবার চেষ্টা করলেন। হজরত ওমর রা. বলেন, যদি লােকজন। আমাকে গ্রেফতার করে আমার গরদান উড়িয়ে দেয়, তবুও আমি আবু বকরের উপস্থিতিতে অন্য কারাে আমীর হওয়াকে পছন্দ করবাে না।।
হজরত আলী রা. বলেন, হে আবু বকর! রসূল স. দ্বীনের কাজে সর্বদা আপনাকেই আগে রাখতেন। তাঁর উপস্থিতিতেই আপনাকে ইমাম বানিয়ে আপনার এক্তেদা করেছেন। আমরাও দুনিয়ার সকল কাজে আপনাকেই সামনে রাখতে চাই। আপনি হাত এগিয়ে দিন। আমি আপনার হাতে বায়াত হবাে।
হজরত আবু সিদ্দিক রা. এর শ্রেষ্ঠত্ব, মহত্ত্ব, সততা ও বিশ্বাসভাজনতার ব্যাপারে সাহবায়ে কেরামের মধ্যে কোনাে মতপার্থক্য ছিলাে না। তিনি বিধর্মীদের ষড়যন্ত্রকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিলেন। তাঁর যুগেই মুসলিমবাহিনী শাম, ইরাক ও বিভিন্ন রাষ্ট্র জয় করেছিলেন। তিনি সাধারণ লােকদেরকে জালেম বাদশাহ্র অত্যাচার থেকে পরিত্রাণ দিয়েছিলেন। রসূল স. এর সময় যেরূপ সদকা, জাকাত, জিযিয়া আদায় হতাে, হজরত আবু বকর। সিদ্দিক রা. এর সময়েও অনুরূপ আদায় হয়েছিলাে। সামান্যও হ্রাস হয়নি। তাঁর যুগেই ভণ্ড মুসাইলামাতুল কাযব নবুওয়াতের দাবি করেছিলাে। আসওয়াদ আনাসি প্রভুত্বের দাবি করেছিলাে। ফলে বিরাট ফেতনা। মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিলাে। তাদের দলে সত্তর-আশি হাজার মানুষ সমবেত হয়েছিলাে। তিনি তাদেরকে সমূলে উৎখাত করেন।
ইমান আনার পূর্বের একটি স্বপ্নঃ তিনি বলেন, রসূল স. এর নবুওয়াতের ঘােষণার পূর্বে আমি স্বপ্নে দেখি আকাশ হতে কাবার ছাদে একটি নূর অবতীর্ণ হলাে, মক্কার সকল গৃহে এর আলাে প্রতিফলিত হলাে। এরপর নূরটি পূর্বের রূপ ধারণ করলাে। তারপর আমার গৃহে প্রবেশ করলাে। আর আমি তা সংরক্ষণ করলাম। সকালে এক গণককে স্বপ্নের তাবির সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। সে বললাে, এটা একটি দুঃস্বপ্ন। এর বেশী সে কিছু বললাে না। এরপর এক যুগ কেটে গেলাে। বাণিজ্য উপলক্ষে আমি বুহায়রা রাহেবের বাড়ি পৌঁছলাম। আমি তার নিকট স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, তােমার পরিচয়? আমি বললাম, আমি কুরায়েশ। পাদরী বললাে, আল্লাহতায়ালা তােমাদের সম্প্রদায়ে একজন নবী প্রেরণ করবেন। তুমি তার মন্ত্রী হবে এবং তাঁর ইন্তেকালের পর হবে তার খলিফা । ইমাম সুয়ুতী, ওমদাতুত্ তাহকিক।
হজরত মােহাম্মদ স. যখন রসূল হিশাবে প্রেরিত হলেন, তখন তিনি আমাকে মুসলমান হতে বললেন। আমি বললাম, প্রত্যেক নবীর নবুওয়াতের দলিল থাকে। আপনার নবুওয়াতের দলিল কী? তিনি স. বললেন, আমার নবুওয়াতের দলিল তােমার ওই স্বপ্ন যা তুমি দেখেছিলে। প্রথম গণনাকারী বলেছিলাে, এটি এক দুঃস্বপ্ন। আর বুহায়রা ব্যাখ্যা করেছিলেন, তােমার সম্প্রদায়ে একজন নবী আসবেন, তুমি তার উজির হবে, তার ইন্তেকালের পর হবে তাঁর খলিফা। আমি বললাম, আপনার নিকট এ সংবাদ কে দিয়েছে? তিনি বললেন, জিব্রাইল। আমি বললাম, আপনার নবুওয়াতের ব্যাপারে আমি আর কোনাে দলিল-প্রমাণ অনুসন্ধান করবাে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ্ ব্যতীত কোনাে উপাস্য নেই। তিনি এক, তার কোনাে শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি— আপনি তাঁর বান্দা ও রসূল।
দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তিঃ ইমাম জুহুরী বর্ণনা করেন, সাহাবায়ে কেরাম যখন তার মােবারক হস্তে খেলাফতের বায়াত গ্রহণ করলেন, তখন তিনি। মিম্বরে উঠে ভাষণ দিলেন। বললেন, আমি কোনাে দিন খেলাফতের প্রতি লােভী ছিলাম না। আমার হৃদয়ে এমন ধারণা কখনােই জাগ্রত হয়নি। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রকাশ্যে বা গােপনে এর জন্য কোনাে দোয়াও আমি করিনি। খেলাফতে আমার কোনাে আনন্দও নেই।
কাশফুল মাহজুব’ প্রণেতা ইমাম সুয়ুতী বলেন, আল্লাহতায়ালা যখন কোনাে বান্দাকে সত্যের উঁচু আসনে আসীন করতে চান ও তাকে মর্যাদা দান করেন তখন বান্দাও আল্লাহর ইচ্ছার অপেক্ষায় থাকেন। কামনা করেন, প্রাপ্ত নির্দেশানুসারে যেনাে অটল থাকতে পারেন। ফকির হওয়ার আদেশ এলে ফকির হয়ে যান। যেমন সিদ্দিকে আকবর রা. এর প্রথম জীবন। আর আমীর হওয়ার আদেশ হলে হন আমীর। যেমন সিদ্দিকে আকবরের শেষ জীবন। সুখ-দুঃখ, জমিদারী ও ফকিরীর ইচ্ছাপােষণে অনাসক্তি, মর্যাদা বর্জনের অগ্রপথিক হজরত সিদ্দিকে আকবর রা.। আর এই দল (নেসবতে সিদ্দিকীভুক্ত) সিদ্দিকে আকবরের এই সুউচ্চ তরিকার অনুসরণ ও অনুকরণের উপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহতায়ালা তার উপর সন্তুষ্ট।
হজরত সিদ্দিকে আকবর রা. বলেন, আমাদের বাড়ী ক্ষণস্থায়ী। আমাদের অবস্থা শূন্য, আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস গণনা করা হয়। অথচ আমাদের মধ্যে অলসতা বিদ্যমান। কাশফুল মাহজুব।
দুনিয়া ও দুনিয়াদারদের কোনাে মূল্য নেই। সে দুনিয়ার কাজে মশগুল হয়ে পড়ে। যখন তুমি নশ্বর জগতের প্রতি ব্যস্ত হয়ে পড়বে, তখন তুমি স্থলিত হবে অবিনশ্বর জগত থেকে। দুনিয়াপ্রীতি ও দুনিয়া উভয়টি আল্লাহপ্রাপ্তির অন্তরায়। আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ উভয়টি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তাঁরা অবগত যে, দুনিয়া লয়শীল। সম্পদ মানুষের। এ জন্য তারা মানুষের সম্পদে হস্তক্ষেপ করা থেকে হাত গুটিয়ে নেন। জীবনের। কয়েকটি শ্বাসের উপর মনােনিবেশ করাকে তাঁরা উদাসীনতা মনে করেন। তাঁরা জানেন যে, তাদের শরীর কাজের বাহন।
বর্ণিত আছে, একবার হজরত সিদ্দিকে আকবর রা. আল্লাহর দরবারে আবেদন করলেন
হে আল্লাহ! আমার জন্য দুনিয়াকে প্রশস্ত করে দাও এবং এর আপদ থেকে আমাকে রক্ষা করাে। আমাকে এতােটুকু দুনিয়া দান করাে, যাতে আমি শুকরিয়া আদায় করতে পারি এবং এমন তাওফিক দান করাে যাতে আমি তােমার সন্তুষ্টির জন্য তা থেকে দূরে থাকি এবং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেই। আর তােমার কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন, তােমার রাস্তায় খরচ করার মর্যাদা, ধৈর্য ও সন্তুষ্টির মাকাম লাভ করতে পারি। কাশফুল মাহজুব।
এই দোয়ায় এই রহস্যটি রয়েছে যে, আমার অভাব অনটন অনিচ্ছাধীন নয় বরং ইচ্ছাধীন। সকল মাশায়েখ ও সুফীয়ায়ে কেরামের একই মত । কিন্তু এক বুজর্গ বলেন, ইচ্ছাধীন অভাব অনটনের চেয়ে অনিচ্ছাধীন অভাব অনটন উত্তম। হজরত সিদ্দিকে আকবর রা. নবী ও রসূলগণের পর সৃষ্টজীবের মধ্যে সর্বোত্তম। কারাে জন্য তার চেয়ে অধিক অগ্রগামি হওয়া বৈধ নয়। হজরত সিদ্দিকে আকবর রা. তাহাজ্জুদ নামাজে কেরাত নিচু আওয়াজে পড়তেন। হজরত ওমর রা. পড়তেন উঁচু আওয়াজে। রসূল স. হজরত আবু বকর রা.কে জিজ্ঞেস করলেন, নামাজে কেরাত আস্তে পড়াে কেনাে? তিনি বললেন, আমি যাকে শােনাই, তিনি তাে অনুপস্থিত নন। আর ফারুকে আজম রা. কে জিজ্ঞেস করেন, তুমি নামাজে উঁচু আওয়াজে কেরাত পড়াে কেনাে? তিনি বললেন, ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগ্রত করি, আর শয়তানকে তাড়াই। এ কারণেই মাশায়েখগণ মাকামে মুশাহাদায় হজরত সিদ্দিকে আকবর রা. কে সম্মুখবর্তী রাখেন। আর মুজাহাদার ক্ষেত্রে ফারুকে আজমকে মনে করেন অগ্রবর্তী। হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. মুশাহাদা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। আর হজরত ওমর রা. দেন মুজাহাদার সংবাদ। মাকামে মুশাহাদার তুলনায় মাকামে মুজাহাদা বিশাল সমুদ্রে একটি বিন্দু মাত্র। এ জন্য মহানবী স. হজরত ওমর রা. কে বলেন, তুমি আবু বকরের নেকীসমূহ থেকে একটি নেকী। যখন হজরত ওমর রা. এর। অবস্থান ইসলামী মানদণ্ডে আবু বকরের তুলনায় এক নেকী তুল্য, তখন অন্যদের ব্যাপারে তাঁর অবস্থান সহজেই অনুমেয়।
কারামত ১ঃ হজরত আয়েশা রা. বলেন, হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. যখন ইন্তেকাল করেন, তখন কতিপয় সাহাবী বলতে থাকেন, আমরা তাঁকে শহীদগণের সাথে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করবাে। আর আমি বলেছিলাম, আমার কক্ষে তাঁর বন্ধুর সাথে দাফন করবাে। এমন সময়। আমার উপর নিদ্রা প্রবল হলাে। আমি আওয়াজ শুনতে পেলাম, হাবীবকে হাবীবের কাছেই রাখাে। আমি জাগ্রত হলে বুঝতে পারলাম, এ আওয়াজ সবাই শুনতে পেয়েছে। এমন কি যারা মসজিদে অবস্থান করছিলাে তারাও।
কারামত ২: ‘শাওয়াহিদুন্ নবুওয়াত’ গ্রন্থে রয়েছে, আমিরুল মু'মিনীন। মৃত্যুর সময় ওসিয়ত করেছিলেন, আমার লাশের খাটটি রসূল স. এর রওজা মােবারকে নিয়ে যাবে এবং আসসালামু আলাইকুম ইয়া রসূলুল্লাহ বলে এই মর্মে আবেদন করবে যে, আবু বকর আপনার রওজায় উপস্থিত। কবুল করলে দরজা খুলে যাবে। তখন তােমরা আমাকে সেখানে দাফন করবে। অন্যথায় জান্নাতুল বাকীতে নিয়ে যাবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা হজরত আবু বকর রা. এর ওসিয়ত অনুযায়ী তাঁর শবাধার রওজা মােবারকে নিয়ে গিয়ে তাঁর ওসিয়তকৃত বাক্যটি শেষ করার আগেই দরজা খুলে গেলাে। আওয়াজ ভেসে এলাে, হাবীবকে হাবীবের কাছে পৌছে দাও।
| এ বর্ণনাটি খাসাইসুল কুবরা থেকে উদ্ধৃত করেন মাওলানা জাকারিয়া সাহেব তাঁর রচিত ফাযায়েলে হজ্ব নামক কিতাবের ৩৬-৪৬ পৃষ্ঠায় ।। | শায়েখ আবু বকর আবু মােহাম্মদ শামবাকী র. বলেন, আমাদের শায়েখ আবু বকর হারার প্রথম জীবনে বাহা নামক স্থানে প্রসিদ্ধ ডাকাত। ছিলেন। যখন তিনি সততার সাথে একনিষ্ঠ তওবা করলেন এবং সাধারণ মানুষ থেকে পৃথক হলেন, তখন তিনি মনে মনে ভাবতে লাগলেন, তিনি নিজেকে এমন এক ব্যক্তির নিকট সমর্পণ করবেন, যিনি তাঁকে আল্লাহ্ পর্যন্ত পৌঁছে দিবেন। সে সময়ে ইরাকে প্রসিদ্ধ কোনাে শায়েখ ছিলাে না। তিনি নবী করিম স. এবং হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. কে স্বপ্নে দেখেন এবং আরজ করেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে একটি খেরকা পরিধান করিয়ে দিন। নবী করিম স. এরশাদ করেন, আমি তােমার নবী। আর আবু বকর তােমার শায়েখ। অতঃপর নবী করিম স. হজরত আবু বকরের দিকে মনােনিবেশ করে বলেন, হে আবু বকর! তােমার ভক্তকে খেরকা পরিধান করিয়ে দাও। আদেশানুযায়ী হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. জামা এবং টুপি পরিধান করিয়ে দিলেন এবং স্বীয় হস্ত মােবারক তাঁর কপাল ও মাথায়। বুলিয়ে দিলেন। বললেন, আল্লাহ্ তােমার মধ্যে বরকত দিন।।
এরপর নবী করিম স. হজরত আবু বকর ইবনে হারারকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আবু বকর ইবনে হারার! তােমার মাধ্যমে আমার তরিকতের সুন্নত জীবিত হবে। আল্লাহতায়ালার প্রিয় বন্ধুগণ হ্রাস পাওয়ার পর তােমার সত্তা থেকে জারী হবে। ইরাকে তরিকতের পন্থা কিয়ামত পর্যন্ত তােমার মাধ্যমে স্থির থাকবে। তােমার আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহের শীতল বায়ু প্রবাহিত হবে। আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহে তার সন্তুষ্টির ধারাবাহিকতা তােমার মাধ্যমে বিস্তার ঘটবে। আবু বকর ইবনে হাররার জাগ্রত হলেন। দেখলেন, যে জামা এবং টুপি হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. দান করেছিলেন সেই জামা এবং টুপি হুবহু তাঁর পরিধানে বিদ্যমান। শায়েখের মাথায় একটি ফোঁড়া ছিলাে তাও দূরীভূত হয়েছে। পৃথিবীতে প্রচারিত হলাে—শায়েখ আবু বকর আল্লাহ পর্যন্ত পৌছে গেছে। সর্বদিকের সৃষ্টজীব শায়েখের দিকে মনােনিবেশ করলাে এবং আল্লাহতায়ালার নৈকট্যের নিদর্শন দেখতে পেলাে। শায়েখের বাণী প্রকাশিত হতে লাগলাে।
ঘটনাটি ইমাম শা’রানী তাঁর ‘তাবাকাতুল কুবরা’ নামক কিতাবের ২য় খণ্ডের ২৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন এবং ইমাম ইয়াফায়ী উল্লেখ করেন। ‘হেকায়েতে ছালাছা’ নামক গ্রন্থে।
বর্ণনাকারী বলেন, আমি কয়েকবার শায়েখ আবু বকরের পাশে সিংহ উপবিষ্ট অবস্থায় দেখেছি। কতক সময় তাঁর কদম মােবারকে লুটিয়ে পড়তেও দেখেছি। শায়েখ ইবনে হাররার সর্বপ্রথম ব্যক্তি, যিনি রেসালাতের যুগের মাশায়েখদের অতিবাহিত হওয়ার পর ইরাকে সুলুকের ভিত্তি স্থাপন করেন। আমি তাঁর ভক্ত ছিলাম।
কারামাত ৩ ঃ শায়েখ আলি ইবনে ওয়াহাব সাজারী কুদ্দিসা সিররুহু বলেন, আমি স্বপ্নে হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা.কে দেখলাম। তিনি বললেন, হে আলী ইবনে ওয়াহাব! আমাকে হুকুম দেওয়া হয়েছে এই টুপিটি তােমাকে পরিধান করাতে। তিনি নিজের আস্তিন মােবারক হতে টুপি বের করে আমার মাথায় পরিয়ে দিলেন। আমি জাগ্রত হলে হুবহু সেই টুপি আমার মাথায় দেখতে পেলাম।
ইমাম ইয়াফায়ী র. রাওজুর রায়াহীনের তাকমিনায় লিপিবদ্ধ করেন, মদিনা মুনাওয়ারায় রওজা মােবারকের নিকট এই কিতাবের পাঠ শােনার সময় নবী করিম স., হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. ও হজরত ওমর রা. তশরীফ রাখেন। মজলিশ শেষে আমি দোয়া করলাম, তখন রসূল স. হজরত সিদ্দিকে আকবরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন। এ ঘটনাটি আমি জাগ্রত অবস্থায় মােশাহাদা (প্রত্যক্ষ) করি ।
হজরত সিদ্দিকে আকবর রা. এর অন্যান্য কারামত ও বিস্ময়কর ঘটনাবলী ‘কারামতে আউলিয়া' নামক গ্রন্থে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। হজরত সিদ্দিকে আকবর রা. এর খেলাফতকাল ছিলাে দুই বছর চার মাস। কোনাে বর্ণনায় দুই বছর তিন মাস ৭ দিন। আবার কোনাে বর্ণনায় এসেছে। আড়াই বছরের কথা। তাঁর বয়স রসূল স. এর বয়সের সমান ৬৩ বছর হয়েছিলাে। ইন্তেকালের তারিখ নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। কারাে মতে ২৩ বা ২৮ জমাদিউল উলা। আবার কারাে মতে ২৩ জমাদিউল আখের মঙ্গলবার মাগরিব ও ইশার মাঝামাঝি সময়ে। কারাে মতে ২৩ হিজরীতে ৯ই জমাদিউল আখের।
তাঁর অন্তিম ওসিয়ত অনুযায়ী তাঁর বিবি আসমা বিনতে ওমায়স তাঁকে গােসল দেন। পুরাতন দুটি কাপড়ে তাকে দাফন করা হয়েছে। কেনােনা নতুন কাপড় উপকারে লাগবে জীবিত মানুষের। | আমিরুল মুমিনীন হজরত ওমর ফারুক রা. সাহাবায়ে কেরামগণকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর নামাজে জানাযা আদায় করেন এবং রসূল স. এর রওজা মােবারকে তাঁকে দাফন করা হয়। নবী ও রসূলগণের পর বনী আদমের
মধ্যে তিনি সর্বোত্তম ছিলেন। এজন্য কালিমায়ে ২ দ্বারা তাঁর ইন্তেকালের তারিখ নির্ধারণ করা যায়।
No comments