ইমাম আহমদ রেযা (রহ.) ব্রিটিশবিরােধী আন্দোলনের তাত্ত্বিক রূপকার


মাওলানা মুহাম্মদ বদিউল আলম রেজভী
বিশ্বব্যাপী ইসলামী দর্শন ও শিক্ষার প্রচার-প্রসারে উপমহাদেশের যে কয়েকজন অসাধারণ প্রতিভাধর মনীষী বহুমুখী অবদান রেখেছেন, যাঁদের ভাস্বর তাদের। মধ্যে আলা হযরত ইমাম আহমাদ রেযা খা ফাজেলে বেরলীভ (রহ.) অন্যতম। তিনি একাধারে সমকালীন বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানের পস্তিত ছিলেন একই সময়ে তিনি ব্রিটিশ বিরােধী আন্দোলনের অন্যতম একজন তাত্বিক রূপকার ছিলেন। মাওলানা বেরলভী (রহ.) 10 ওয়াল 1272 হিজরি মুতালিক 14 জুন 1856 খ্রিস্টাব্দে ভারতের ইউপির বেরলী শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। জন্মের পর বুজুর্গ দাদা নাম রাখলেন মুহাম্মদ আহমাদ রেযা খান, শ্রদ্ধেয় পিতা আহমদ মিয়া ডাকতেন। মাতা স্নেহের সাথে “আমান মিয়া” নামে ডাকতেন। তার সংখ্যা তাত্ত্বিক নাম ‘আল-মুখতার”। তিনি 1286 হিজরী মুতাবিক 1861 খ্রিস্টাব্দে চার বছর বয়সে কুরআন মাজীন পাঠ সমাপ্ত করেন। খােদা প্রদত্ত অসাধারণ মেধা শক্তির কারণে জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় 1286 হিজরী মুতাবিক 1861 সালে মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে শিক্ষা সমাপনী সনদ অর্জন করেন। মাওলানা বেরলভী নিম্নোক্ত শিক্ষাগুরুদের নিকট থেকে ইলমে হাদীস ও ইলমে ফিকহর সনদ অর্জন করেন।
১। শাহ আলে রাসূল মারাহারাভী (ওফাত :1216 হি /1878 খ্রি.)
২। মাওলানা নক্বী আলী খান (ওফাত 1297 হি./ 1880 খ্রি.)
৩। শায়খ আহমদ বিন যায়নী দাহলান মক্কী (ওফাত: 1301হি/ 1883 খ্রি.)
৪। শায়খ আব্দুর রহমান সিরাজ মক্কী (ওফাত : ১৩০১হি. ১৮৮৩খ্রি.)
৫। শায়খ হোসাইন বিন সালেহ (ওফাত: ১৩০২হি./১৮৮৪খ্রি.)
৬। মাওলানা আবদুল আলীম রামপুরী (ওফাত: ১৩০হি./১৮৮৫খ্রি.)
৭। শায়খ আবুল হােসাইন আহমদ আন নূরী (ওফাত : ১৩২৪হি/১৯০৬খ্রি.)
৮। মির্জা গােলাম কাদের বেগ (ওফাতঃ ১৩০১হি./১৮৮৩ খ্রি.)

মাওলানা বেরলভীর হাদিসের সনদসূত্র হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী হযরত শেখ আবেদ সিন্ধী ও অধ্যমা আবদুল আলী লক্ষ্ণৌভীর সাথে সম্পৃক্ত | আ’ল হযরত 1214হিজরী মােতাবেক 1887 খ্রি. বুজুর্গ পিতা আল্লামা নকী আলী খানের সাথে হযরত শাহ আলে রসূল মারহারভী (ওফাত: 1216হি/1878খ্রি. ) এর হাতে বায়আত গ্রহণ করে সিলসিলা করে সিলসিলায়ে কাদেরীয়ায় অন্তর্ভুক্তি হন। কামিল মুর্শীদ নব দীক্ষিত মুরীদের | চেহারা অবলােকনে নূরানী দ্বীপ্তি দেখে পিতাপুত্র উভয়কে খিলাফত ও ইযাযত দান করেন। খিলাফতের অনুমতি প্রাপ্ত হয়ে আ’লা হযরত তরীক্বত জগতে এক রুহানী ইনকিলাব ও ঈমানী বিপ্লব সাধন করেন। আ'লা হযরত তরীকতের নামে প্রচলিত অনৈসলামিক কার্যকলাপের | মূলােৎপটান করে এক্ষেত্রে যুগান্তকারী সংস্কার সাধন করেন। কতিপয় লােক শরীয়ত ও তরীকৃতের বিভাজনে। | লিপ্ত হয়ে ইসলামী শরীয়তের মৌলিক নীতিমালাকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র তরীকত অবলম্বনই যথেষ্ট। এমন মানসিকতা পােষণ করত: এ ভ্রান্ত ধারণার আপনােদনে মাওলানা বেরলভী কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। তার মতে, শরীয়ত ও তরীকৃত একটি অপরটির পরিপূরক। একটি পালন আর অপরটির বর্জন বিভাজনের নামান্তর | যা পূর্ণতার অন্তরায় বরং শরীয়ত ও তরীকৃতের সমন্বয় ইসলামের পূর্ণতা এ বিষয়ে তিনি “শরীয়ত ওয়া তরীকৃত” নামে একটি স্বতন্ত্র পুস্তক রচনা করেন।
আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (রহ.) ইসলামী শরীয়তের অকাট্য দলিল প্রমাণাদির ভিত্তিতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করা হারাম সম্পর্কিত ‘আযুবদাতুয যাকীয়্যাহ লিতাহরীমে সজুদুত তাহীয়্যাহ নাম একটি গবেষণাধর্মী নির্ভরযােগ্য গ্রন্থ রচনা করেন । তিনি শুধু গভীর জ্ঞানের অধিকারী একজন আলেমেদ্বীন ছিলেন তা নয় বরং জাতির ক্রান্তিকালে ইসলামের শ্বাশ্বত আদর্শকে সঠিক রূপে উপস্থাপনার ক্ষেত্রে তিনি সুনিপুণ প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। এ কালজয়ী ব্যক্তিত্ব তাঁর অসামান্য কৃতিত্বের দ্বারা বিশ্বজনীন স্বীকৃতি ও সম্মান স্বরূপ ‘আ’লা হযরত, 'কলম সম্রাট’, ‘গুজায়াতে জঙ্গ', রণবীর) ইত্যাদি দূর্লভ সম্মানে ভূষিত হন এবং জ্ঞানী গুণী ও সুধী মহলে সর্বত্র তিনি সমাদৃত হন। ধর্মীয় জটিল কঠিন বিষয়াদির বিশ্লেষণধর্মীয় সমাধান করার পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন, জ্যোতিষশাস্ত্র ও নক্ষত্র বিদ্যায় তিনি প্রজ্ঞা ও পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন । ১৯১৯ খ্রি. ১৮ অক্টোবর ইংরেজি ‘দি এক্সপ্রেস' পত্রিকায় আমরিকার জ্যোতিষ বিজ্ঞানী প্রফেসর আলবার্ট এফ পুরটা একটি ভবিষ্যদ্ববাণী করেন যে, ১৯১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বরকে কয়েকটি গ্রহ সূর্যের সামনে চলে আসার দরুণ উদ্ভূত, মধ্যাকর্ষণ পৃথিবীতে মহা প্রলয়ের সৃষ্টি করবে। আ’লা হযরতকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কুরআন সুন্নাহর গবেষণার আলােকে মহাকাশ বিজ্ঞানীর ভবিষ্যতবাণী ভ্রান্ত বলে রায় দেন। ১৭ ডিসেম্বর দেখা গেল পৃথিবীর কোথাও কোন প্রকার বিপর্যয় দেখা যায়নি। আ'লা হযরতের গবেষণা অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হলাে। যুক্তরাষ্ট্রীয় বিজ্ঞানীর ভবিষ্যদ্ববাণী ভুল প্রমাণিত হলাে। প্রাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীদের ভ্রান্ত তত্ত্বের বিরুদ্ধে এটা ছিলাে ইসলামের এক সুমহান বিজয়। কুরআন ও সুন্নাহর আলােকে আ’লা হযরতের জ্ঞানগবেষণার বিশাল জগৎ বিনির্মিত। মার্কিন। বিজ্ঞানীদের মতবাদ খণ্ডনে আলা হযরত পরপর তিনটি গবেষণাধর্মী পুস্তক রচনা করেন।

১। আল কালিমাতুল মুলহামাতু ফীল হিকামাতির মুহকামা লি ওয়াহীল ফালসাফাতিল মুশামমাহ (১৯১৯ খৃ.)
২। ফওজে মুবীন দর রদ্দে হরকতে যমীন (১৯১৯ খৃ.)
৩। নযুলে আয়াত ই ফুরকান বি সুকুনে যমীন ও আসমান (১৯১৯ খৃ.)।

উপমহাদেশে সুদীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাসে ও ধর্মীয় অঙ্গনে আকিদাগত বিভ্রান্তির সন্ধিক্ষণে মুসলিম মিল্লাতের ঈমান আক্বিদা সংরক্ষণে তাঁর গৌরবােজ্জ্বল ঐতিহ্য রয়েছে। ১৮৯৭ সনে ভারতের পাটনায় অনুষ্ঠিত | ঐতিহাসিক কনফারেন্স মাওলানা বেরলভী (রহ.) এর প্রদত্ত ভাষণ মুসলমানদের স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র | প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র রচনা করেছে। তিনি ছিলেন প্রকৃতপক্ষে। দ্বিজাতি তত্ত্বের পথিকৃৎ। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের | প্রতিষ্ঠা তাঁরই চিন্তাধারার বাস্তব রূপায়ন। এই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সনে দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা বিশ্ব মানচিত্রে|বাংলাদেশকে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি দান করেছে। তিনি ১৩৩৯ হিজরী মুতাবিক

১৯২৫০ খৃ. তরকে মােয়ালাত বা অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে ঐতিহাসিক ফতোয়ার আলােকে বৃটিশ বেনিয়াদের কবল থেকে ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার প্রয়াসে সকলকে সজাগ করেন। মুসলমানদের স্বতন্ত্র সাবাসভূমি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দ্বি-জাতি তত্ত (Two Nation Theory) এর বিকল্প নেই বলে ঘােষণা করেন। এ ঐতিহাসিক অসহযােগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ১৯২০ সালে অলি হজ্জাতুল মাতামেনা বি আয়াতিল মুমতাহিনা নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। যা উপমহাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের এক ঐতিহাসিক অভ্রান্ত দলিল। এছাড়া তিনি উপমহাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর আরাে কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন।

১। এলামুল এলমা বিআন্না হিন্দুস্তান দারুল ইসলাম (১৯৮৮ খৃ.)
২। দাওয়ালু আয়শি ফী আইম্মতি কুরাইশি (১৯১২ খৃ.)
৩। তাদবীর ই ফালাহ ওয়া নাজাত ও ইসলামাহ (১৯১২ খৃ.)
পরবর্তীতে ভারতবর্ষে মাওলানা বেরলভীর রাজনৈতিক দর্শন ও ভাবাদর্শে মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এগিয়ে এলেন। তাদের নেতৃত্বে চলতে লাগলাে মুসলমানেদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। ১৯৩০ সালে ড, আল্লামা ইকবাল এলাহাবাদে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচিত হলে তিনি মুসলমানদের পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জোরদার করেন । ফলশ্রুতিতে ১৯৪৭ সালে ১৪ আগস্ট মুসলিম লীগের আন্দোলন সফল হলাে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার স্বাধীন সার্বভৌম মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান সৃষ্টি হলাে এবং ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করলাে। বিশ্বব্যাপী ইসলামী আদর্শের প্রচার প্রসারে তার অবদান ছিল বিস্ময়কর। জ্ঞানবিজ্ঞানের সর্বত্র রয়েছে তার তুলনা তিনি | নিজেই । কুরআন হাদিস, তাফসীর, ফিকহ, উসূল, দর্শন, মান্তিক, ভাষাতত্ব, ধর্মতত্ত্ব, সুফীতত্ত্ব সাহিত্য বিজ্ঞান, প্রতিটি শাখায় ছিলেন অসাধারণ প্রতিভাবান এক অতলান্ত সুবিস্তুত মহাসাগর। বিশ্বের বহু জ্ঞানী গুণী পণ্ডিতবর্গ এ মনীষীর প্রতিভার স্বীকৃতি দিয়েছেন। আল্লামা ড. ইকবাল তাকে যুগের আবু হানিফা অভিধায় ভূষিত করেছেন। আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ড. স্যার জিয়াউদ্দিন তাঁকে ননাবেল প্রাইজের যােগ্য ব্যক্তি হিসেবে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ১৩৩০ হিজরী মােতাবিক ১৯২২ খ্রি. শায়খ মূসা আলী আশশামী বাযহারী কতৃর্ক ইমামুল আইম্মা আল মুজাদ্দিদুল উম্মাহ তথা চতুর্দশ শতাব্দীর মহান সংস্কারক উপাধিতে ভূষিত হন। তাঁর রচিত সহস্রাধিক গ্রন্থাবলী ইসলামী জ্ঞান ভান্ডারকে করেছে সমৃদ্ধ। তাঁর রচনাবলী ইসলামের এক অমূল্য সম্পদ।
আদর্শ জাতি ও সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে তাঁর জীবন দর্শনের গবেষণা আজ সময়ের দাবি। বিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইসলামের শাশ্বত মূল্যবোধ ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে তাঁর জীবনের অন্যান্য কীর্তিবাদ দিলেও আল কুরআন ও ফিকহ শাস্ত্রের উপর তাঁর অনবদ্য অবদানের নিমিত্তে ইতিহাসের তিনি চিরজাগরুক হয়ে থাকবেন।
'মহাগ্রন্থ ! আল কুরআনের উপর নির্ভুল ও বিশুদতম। অনুবাদ ক্ষেত্রে তার প্রণীত কানযুল ঈমান ফী তারজুমাতি কুরআন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। ১৩৩০ হিজরী মুতাবিক ১৯১১ , এর অনুবাদ কর্ম সম্পন্ন হয়েছিল। পরবর্তীতে তাঁরই খলিফা সদরুল আফাযিল মাওলানা সৈয়দ নাঈম উদ্দিন মুরাদাবাদী (র.) ওফাত : ১৩৬৭ হি./১৯৪৮ খ্রি. 'খাযাইনুল ইরফান ফী তাফসীরুল কুরআন' নামে এ উর্দু তরজুমার উপর তাফসীর বা পার্শ্ব টীকা লিখেছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় কানযুল ঈমান অনুদিত হয়ে একাধিকবার প্রকাশিত হয়েছে। ইংরেজিতে চারজন অনুবাদ সম্পন্ন করেছেন । যথাক্রমে প্রফেসর ড. আখাতর হানিফ ফাতেমী (ইংল্যান্ড), প্রফেসর শাহ ফরিদুল হক (করাচী), আলে রাসূল হাসনাইন (মারহারা শরীফ ভারত), প্রফেসর আবদুল মাজীদ (লাহাের), সিন্ধু ভাষায় মুফতী রহীম উদ্দিন সিকান্দরী (লাহাের), মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল্লাহ (লারকানা), বাংলায় মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান চট্টগ্রাম বাংলাদেশ, ডাচ ভাষায় গােলাম আহমদ (হল্যান্ড), হিন্দি ভাষায় নুরুদ্দিন নিযামী (মুম্বাই ভারত), রােমান ভাষায় মুহাম্মদ নজরুল হানফীয়া (সিঙ্গাপুর), হাঙ্গেরী ভাষায় আলহাজ্ব মুহাম্মদ মুয়াজ্জম আলী (করাচী)। ফিকাহ হানফির আলােকে সংকলিত ফাতওয়া এ রিজভীয়্যাহ পূর্ণনাম আল আতায়ান নবভিয়্যাহ ফিল ফাতওয়ার রিজভীয়্যহ' ইসলামী ফিকহ শাস্ত্রের জগতে এক অমূল্য সম্পদ, হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর শেষ দশক আর চতুদর্শ শতাব্দীর প্রথম চার দশকে বিশাল ফতওয়াগ্রন্থ রচিত হয়; যা মাওলানা বেরলভীর শ্রেষ্ঠ অমর কীর্তি গ্রন্থটি বার খণ্ডে বিভক্ত, প্রতি খণ্ড সহস্রাধিক পৃষ্ঠা সম্বলিত । বার হাজার পৃষ্ঠার অধিক কলেবরের এ গ্রন্থটি পৃথিবীর প্রধান চারটি সমৃদ্ধ ভাষা যথাক্রমে আরবি, উর্দু, ফার্সি ও ইংরেজিতে লিখিত। এ বিশাল গ্রন্থ তার গভীর প্রজ্ঞা, | গবেষণা ও অনুসন্ধানে উজ্জ্বল স্বাক্ষর।
মাওলানা বেরলভী ১২৮৬ হিজরী ১৪ শাবান মােতাৰিক ১৮৬৯ খ্রি. মাত্র তের বৎসর দশ মাস বয়সে স্বীয় বুজুর্গ পিতা মাওলানা নকী আলী খানের তত্ত্ববধানে যত ওয়া লেখার কাজ শুরু করেন। ১২৯৩ হিজরী মুতাবিক ১৮৭২ খ্রি. সাত বছর পর ফতওয়া লেখার স্বাধীন অনুমতি লাভ করেন । ১২৯৭ হি, মুতাবিক ১৮৮০খ্রি. পিতার ইন্তেকালের পর থেকে ফতওয়া লেখার সার্বিক দায়িত্ব | নিষ্ঠার সাথে আঞ্জাম দিতে থাকনে। ১৩৩৭ হি./১৯১৮ | খ্রি. তার ফতওয়া লেখার কাজ পঞ্চাশ বছরে উন্নীত হয়। এ পঞ্চাশ বছর অবধি অক্লান্ত শ্রম ও সাধনার বিনিময়ে | হানাফী ফিকহ শাস্ত্রের ইনসাইক্লোপিড়িয়া তথা বিশ্বকোষ নামে খ্যাত বার খণ্ডের এ বিশাল ফতওয়া গ্রন্থের | সংকলন সম্পন্ন হয়েছিল । মাওলানা হাসান রেযা খান আ’লা হযরতের ফিকহি যােগ্যতা মূল্যায়নের উপর | গবেষণা করে ভারতের পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৯ সালে ২২ ডিসেম্বর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্বের বুকে আপন সৃষ্টিশীলতার দ্বারা যারা মানুসের অন্তরের অন্তঃস্থলে ঠাঁই করে নিয়েছেন। ইমাম আহমদ রেযা খান তেমনি এক কিংবদন্তী তুল্য মহামনীষীর নাম। ১৩৪০ হিজরী সালের ২৫ সফর ১৯২১ খ্রি. শুক্রবার বাদ জুমা ২টা ৩৮ মিনিটে হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর মহান মুজাদ্দিদ আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা (রহ.) মহান প্রভুর অনন্তসান্নিধ্যে গমন করেন। ভারতের বেরেলী শহরে দারুল ইলুম মানারুল ইসলাম এর উত্তর পার্শ্বস্থ মহান শানদার ভাবে নির্মিত। মাযার শরীফে মুসলিম জাহানের গৌরব এ মহান ইমাম চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।

* লেখক : ইসলামি চিন্তাবিদ
ও সভাপতি, আ'লা হযরত ফাউন্ডেশন।
অধ্যক্ষ, হালিশহর তৈয়্যবিয়া ফাযিল মাদ্রাসা।

No comments

Powered by Blogger.