হযরত খাজা সৈয়দ আমীর কুলাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি

সাইয়্যেদ আমির কুলাল বুখারী সমাধি

সাইয়্যেদ আমির কুলাল বুখারী (676-772 হি:)


তাঁর বেলায়েতের সম্পর্ক ছিলাে হজরত বাবা সাম্মাসী কুদ্দিসা সিররুহুর সাথে। তিনি ছিলেন অভিজাত সাইয়্যেদ বংশােদ্ভূত। তাঁর জন্ম ও ইন্তেকাল হয় সােওখরে। তিনি কুম্ভকার অর্থাৎ পাতিলের ব্যবসায়ী ছিলেন। বােখারার আঞ্চলিক ভাষায় কুম্ভকারকে কুলাল বলা হয়। | হজরত আমীর কুলাল কুদ্দিসা সিররুহু যৌবনের প্রারম্ভে কুস্তিগীর ছিলেন। একদিন হজরত বাবা সামমাসী কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে আমীর কুলালের কুস্তি খেলা দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। অনেকক্ষণ পর্যন্ত খেলা দেখলেন। মুরিদগণ বুঝতে পারলেন না, হজরত বাবা সাম্মাসীর এতােক্ষণ ধরে এখানে দাঁড়িয়ে থাকার অর্থ কী? হজরত বাবা সাম্মাসী র. তাদের অন্তরের অবস্থা বুঝতে পেরে বললেন, এই কুস্তিগীরদের মধ্যে একজন মরদে মুজাহিদ রয়েছেন, যার সান্নিধ্য দ্বারা অনেক লােক কামালতের দরজায় উপনীত হবে। আমার দৃষ্টি এখন তার উপর। আমি চাই, সে যেনাে আমার সঙ্গি হয়ে যায়। এমন সময় আমীরের দৃষ্টি খাজা বাবা সামমাসীর প্রতি পতিত হলাে। হজরত খাজার জবা (আকর্ষণ) ও তাওয়াজ্জোহ্ তার উপরে প্রভাব বিস্তার করলাে। হজরত খাজা সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে গেলেন। আমীর কুলালও কুস্তি ছেড়ে হজরত খাজা বাবাকে অনুসরণ করলেন। এভাবে উপনীত হলেন হজরত খাজা সাহেবের খানকায়। আমীর। কুলাল র. কে নির্জনে নিয়ে গিয়ে তরিকতের তালীম দিলেন। তাঁকে স্বীয়। সন্তানরূপে গ্রহণ করলেন। চিরদিনের জন্য শেষ হয়ে গেলাে হজরত আমীর কুলালের কুস্তিগীরের জীবন। তিনি একাধারে বিশ বছর পর্যন্ত খাজা বাবার খেদমত করেন। প্রতি সপ্তাহে সােমবার ও বৃহস্পতিবার এই দুই দিন স্বীয় গ্রাম সােওখর হতে সামমাসে যেতেন। দীর্ঘ সময় ধরে সােহবত ও খেদমতে থাকতেন। তাঁর পীর-মাের্শেদের খানকা ছিলাে পাঁচ ক্রোশ দূরত্বে। তিনি আসা যাওয়ার পথে হজরত খাজেগানের তরিকায় এমনভাবে মশগুল থাকতেন যে, বাইরের কেউ তা বুঝতেই পারতাে না। এভাবে খাজার তরবিয়ত দ্বারা তিনি পরিপূর্ণতা ও খেলাফতের মর্যাদা হাসিল করেন। রাশহাত পৃষ্ঠা ৪৩।

কারামত ১ ঃ হজরত আমীর কুলালের মা বলেন, যখন আমীর কুলাল আমার গর্ভে ছিলাে, তখন
সন্দেহযুক্ত কোনাে খাবার খেলে আমার পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হতাে। আমি বুঝতে পারতাম,
আমার গর্ভে আছে এক পবিত্র শিশু। তার কারণেই সন্দিগ্ধ কোনাে কিছু আমার সহ্য হয় না। এরপর
থেকে আহারের ব্যাপারে আমি খুবই সতর্কতা অবলম্বন করলাম। রাশহাত। পৃষ্ঠা ৪২।
টীকা :তাঁর বংশপরম্পরা এরকম— সাইয়্যেদ শামসুদ্দিন খাজা আমীর কুলাল ইবনে আমীর হামযা ইবনে আমীর ইয়াকূব ইবনে ইসমাঈল ইবনে গাওছ ইবনে আবদুল মান্নান ইবনে কিয়ামুদ্দিন ইবনে রুকুনুদ্দিন ইবনে নূরুদ্দিন ইবনে আবদুল খালেক ইবনে আলীমুল্লাহ ইবনে শায়েখ বাকা ইবনে আবদুল ওয়াহাব ইবনে শামসুদ্দিন ইবনে আবু ইসহাক ইবনে আবুল হাসান ইবনে সদরউদ্দিন ইবনে হামেদ ইবনে মাহমুদ ইবনে আহমদ ইবনে আবদুল কাদের ইবনে হােসেন আহমদ ইবনে কাসেম ইবনে জয়নুল। আবেদীন সানি ইবনে মােহাম্মদ সালেহ ইবনে জাওয়াদ ইবনে ইমাম আলী মূসা রেজা ইবনে ইমাম মূসা কাজেম ইবনে ইমাম জাফর সাদেক ইবনে ইমাম মােহাম্মদ বাকের ইবনে ইমাম জয়নুল আবেদীন ইবনে ইমাম হােসেন। ইবনে হজরত ফাতেমা যাহরা এবং হজরত আলী রেদ্বওয়ানাল্লাহি আলাইহিম আজমাঈন।

কারামত ২ঃ হজরত আমীর কুলাল র. যৌবনে কুস্তিগীর ছিলেন। এক কুস্তির আখড়ায় তার চারপাশ
শূন্য করে দাঙ্গা যুদ্ধংদেহী অবস্থা প্রকাশ করতে ছিলেন। একদিন কুস্তির আখড়ার একজনের খেয়াল
হলাে এই সাইয়্যেদজাদা পবিত্র বংশােদ্ভূত। তিনি আবার কুস্তি খেলেন কেনাে? অযথা শরীর পরীক্ষার
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন কেনাে? এগুলাে তাে আহলে বেদাতীদের কাজ। এরকম চিন্তার মধ্যেই তিনি
তন্দ্রাভিভূত হলেন। দেখতে পেলেন, কিয়ামত শুরু হয়েছে। আর তিনি বুক পর্যন্ত মাটি ও কাদার মধ্যে
ডুবে গেছেন। হঠাৎ দেখলেন, হজরত আমীর কুলাল এলেন এবং তার দুই হাত ধরে তাকে কাদা থেকে
বের করে আনলেন। তন্দ্রাভঙ্গ হবার পর আমীর কুলাল তাঁকে বললেন, আমি এই দিনের জন্যই শক্তি
পরীক্ষা করেছি। রাশহাত পৃষ্ঠা ৪২-৪৩।
উল্লেখ্য, হজরত আমীর কুলাল র. ব্যতীত হজরত খাজা বাবা সামমাসীর আরও তিনজন খলিফা ছিলেন।
তাঁরা খাজা বাবা সামমাসীর পর মুরিদান ও সালেকবৃন্দের তালিম-তরবিয়তের কাজে রত ছিলেন। তাঁরা
হলেন—
১. খাজা সূফী সােওখরী। জন্ম সােওখর গ্রামে। যা বােখারা শহর থেকে দুই ফরসখ দূরে অবস্থিত।
২. খাজা মাহমূদ সামমাসী। তিনি ছিলেন খাজা বাবা সামূমাসীর পুত্র। ৩. মাওলানা আলী দানেশ মানদ
কাদ্দাসাল্লাহু আসরারাহুম।
ইন্তেকাল ঃ ৭৭২ হিজরী ৮ জমাদিউল আউয়াল বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের সময় হজরত সাইয়্যেদ আমীর কুলাল র. ইন্তেকাল করেন। সােওখর অঞ্চলেই তাঁর মাজার শরীফ অবস্থিত।

No comments

Powered by Blogger.