হজরত খাজা মােহাম্মদ বাবা সামাসী কুদ্দিসা সিররুহু

খাজা মুহাম্মদ বাবা সমমাসি’র সমাধি

খাজা মুহাম্মদ বাবা সমমাসি (মৃত্যু। 755 এইচ)
তরিকায় তাঁর নেসবত ছিল হজরত আজিজান কুদ্দিসা সিররুহুর সাথে তিনি তাঁর প্রথম শ্রেণীর খলিফা ছিলেন। তাঁর আবির্ভাব তিরােধান সাম্মাসের মাটিতেই সংঘটিত হয়েছিলাে। এটা রামেতিন অঞ্চলের একটি গ্রামের নাম। যা রামেতিন থেকে এক ক্রোশ দূরে অবস্থিত। আর বােখারা থেকে তিন ক্রোশ দূরে। হজরত আজিজানের অন্তিমযাত্রার সময় ঘনিয়ে এলে তিনি তাঁর মুরিদগণ থেকে খাজা বাবা সামমাসীকে মনােনীত করেন। খেলাফত প্রদান করে নিজের স্থলাভিষিক্ত করেন এবং সকল মুরিদান প্রিয়জনকে বাবা সাম্মাসীর অনুগত   সান্নিধ্যে থাকার নির্দেশ দেন। রাশহাত পৃষ্ঠা ৪১।

হজরত খাজা বাবা সামমাসীর সর্বদা এমন হাল জারি থাকতাে যে, তিনি সাম্মাস গ্রামে অবস্থিত বাগানে যেতেন। নিজ হাতে গাছের ডাল-পালা ছেঁটে ফেলতেন । তার উপর বিশেষ অবস্থা জারী হতাে। হুঁশ ফিরে এলে পুনরায় আঙ্গুরের বাগানে গিয়ে ডাল-পালা ছাঁটতেন। আবার তার উপর সেই হাল-অবস্থা প্রভাব ফেলতাে এবং তাঁকে বেখবর করে দিতাে। হালের এমন অবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকতাে। রাশহাত পৃষ্ঠা ৪২।

কারামত ১ ঃ হজরত খাজা বাহাউদ্দিন নক্শবন্দ কুদ্দিসা সিররুহু হজরত খাজা সাম্মাসীর গ্রহণকৃত শাগরিদ ছিলেন। খাজা নক্শবন্দের জন্মের পূর্বে তাঁর জন্মস্থান কুশাক হিন্দুওয়ান অতিক্রমকালে বাবা সাম্মাসী বলতেন, এই মাটি থেকে একজন মহামানবের সুঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে। খুব শীঘ্রই কুশাক হিন্দুওয়ান কছরে পরিণত হবে। যখন তার মহাআর্বিভাবের সময় সমুপস্থিত হলাে তখন তিনি বললেন, সেই সুরভি এখন সন্নিকটবর্তী। মনে হয় তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেলাে তিন দিন আগে তিনি ধরাধামে আগমন করেছেন। তাঁর দাদা মহান বুজর্গের নেক নজর কামনার্থে হজরত খাজা বাবা সামাসির কাছে উপস্থিত হন। বলেন, এই শিশু আমারই সন্তান। আমি তাকে আমার সন্তান হিশাবেই গ্রহণ করলাম। অতঃপর তিনি তাঁর মুরিদদেরকে বললেন, ইনি সেই মহাপুরুষ যার খুশবু আমি পাচ্ছিলাম। অচিরেই এই শিশু তার যুগের শ্রদ্ধাভাজন সরদার হবে।

অতঃপর তিনি হজরত আমীর কুলাল কুদ্দিসা সিররুহুকে সম্বােধন করে বললেন, আমার এই
সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে অবহেলা কোরাে না। করলে আমি তােমাকে ক্ষমা করবাে না।
একথা শুনে খাজা আমীর কুলাল কুদ্দিসা সিররুহু উঠে দাঁড়ালেন। অত্যন্ত আদবের সাথে
সিনায় হাত রেখে বললেন, যদি তাঁর তালিম তরবিয়তের ব্যাপারে অবহেলা করি, তবে আমি
মানুষ নই। 

 টীকা : কুশাক হিন্দুওয়ানের নাম কোনাে কোনাে কিতাবে কসরে হিন্দুওয়ান বলে উল্লেখ রয়েছে। এর দ্বারা খাজা বাহাউদ্দিন নক্শবন্দের জন্মস্থানকে বুঝায়। কুশাক ও কসরের অর্থ প্রাসাদ। হিন্দুওয়া শব্দটি হিন্দ শব্দের বহুবচন। ফার্সি ভাষায় হিন্দ শব্দের অর্থ চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী ইত্যাদি। সম্ভবতঃ হজরত খাজার জন্মের পূর্বে এই এলাকায় দুষ্কৃতকারীদের উপদ্রব ছিলাে। এই কারণে খাজা বাবা সাম্মাসী ওই স্থানকে কসরে হিন্দুওয়ান বলেছেন। হজরত খাজা নক্শবন্দের বরকতে তা কসরে আরেফান নামে প্রসিদ্ধ হয়।

কারামত ২ ঃ হজরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ র. বলেন, যখন আমার বিবাহের সময় নিকটবর্তী
হলাে, তখন আমার দাদা আমাকে হজরত বাবা সামাসী কুদ্দিসা সিররুহুর খেদমতে প্রেরণ করলেন,
যাতে তাঁর কদমবুসির বরকত অর্জন করে শুভবিবাহের কাজ সুসম্পন্ন করি। তাঁর খেদমতে উপনীত
হয়ে প্রথমে আমি তাঁর মসজিদে দুই রাকাত নামাজ। আদায় করলাম। যখন মাথা সেজদায় রাখলাম
তখন আমার মুখ থেকে বের হয়ে এলাে— হে আমার প্রভুপালক! যদি তােমার পক্ষ থেকে কোনাে বিপদ
আমার উপর আপতিত হয় তা সহ্য করার শক্তি যেনাে পাই, আর তােমার ভালােবাসার কাজ করার
শক্তিও আমাকে প্রদান করাে। সকালে যখন বাবা সাম্মাসীর খেদমতে উপস্থিত হলাম তখন তিনি বললেন,
হে বৎস! এরূপ দোয়া কোরাে— হে আমার আল্লাহ্! তােমার যা ইচ্ছা, তার উপর অটল। থাকার অনুগ্রহ
ও অনুকম্পাময় তাওফিক এই দুর্বলকে দান করাে। শােনাে, আল্লাহর ইচ্ছা এমন নয় যে, বান্দা বিপদগ্রস্ত
হােক। তবে কোনাে হেকমতের কারণে যদি কাউকে বিপদকবলিত করেন, তবে তাকে তা সহ্য করার শক্তি
প্রদান করেন। তার কল্যাণের দিকসমূহ প্রকাশ করে দেন। নিজের বিপদ কামনা করা ঠিক নয়। এমন
দুঃসাহস না করাই উচিত। নুফহাত পৃষ্ঠা ৩৪২।

কারামত ৩ ঃ হজরত খাজা নকশবন্দ র. বলেন, একদিন হজরত বাবা সামমাসী দাওয়াত কবুল করে
আমার বাড়িতে আগমন করলেন। আহার। শেষে আমাকে একটি রুটি প্রদান করলেন। আমার ধারণা
হলাে তিনি পরিতৃপ্তির সঙ্গে পানাহার করেছেন। কিছুক্ষণ পর আমরা নির্দিষ্ট স্থানে এক বাড়িতে পৌঁছলাম।
তিনি বললেন, রুটিটি যত্নসহকারে রেখেছাে তাে? কাজে লাগবে। আমি ইতিবাচক মনােভাব প্রকাশ
করলাম। তিনি পুনরায় যাত্রা করলেন। আমিও তার সাথী হলাম। পথিমধ্যে আমার অন্তর অকারণে
সংশয়াচ্ছন্ন হলাে।
তিনি বললেন, বাতেনকে হেফাজত করাে। যখন তিনি বাগজাবি মুলিয়ায় যেতেন, তখন পথিমধ্যে এক
ভক্তের বাড়িতে থামতেন। সেদিনও সেখানে থামলেন। ওই ভক্ত অত্যন্ত আনন্দের সাথে হজরতকে
সম্ভাষণ জানালেন। হজরতকে তাঁর গৃহে নিয়ে গিয়ে অনেকভাবে আপ্যায়ন। করলেন। এমন সময় এক
বৃদ্ধকে অত্যন্ত অস্থির ও চঞ্চল দেখা গেলাে। তিনি কখনাে বাইরে কখনাে ভিতরে যাওয়া-আসা করছেন।
হজরত তাঁর এমতাে চঞ্চলতার কারণ জানতে চাইলেন। ভক্ত বললেন, দুধ পাওয়া গেছে। কিন্তু রুটি পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক অনুসন্ধান করা হলাে তবু পাওয়া গেলাে না। আমাদের ইচ্ছা আপনার সামনে রুটি ও দুধ উপস্থিত করি । হজরত খাজা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, রুটিটি বের করাে। ওর হাতে দাও। আমি আদেশ পালন করলাম। তিনি বললেন, দেখলে তাে রুটিটি এখন কেমন কাজে লাগলাে। হজরত বাহাউদ্দিন নকশবন্দ র. বলেন, আমি হজরত খাজার অসংখ্য কারামত দেখেছি। যতাে দেখেছি ততােই তাঁর প্রতি আমার ভক্তি ও ভালােবাসা বৃদ্ধি পেয়েছে।


উল্লেখ্য, হজরত আজিজানের খলিফাগণের মধ্যে হজরত বাবা সাম্মাসীর পরে ছিলেন হজরত খাজা খুরদ। তিনি হজরত আজিজানের জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন। ইতােপূর্বে তাঁর কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় খলিফা ছিলেন খাজা মােহাম্মদ কুলাহদুষ। তাঁর মাজার শরীফ খাওয়ারিজমে। তৃতীয় খলিফা মােহাম্মদ সালাহ্। তাঁর পবিত্র সমাধি বলখে। চতুর্থ খলিফা মােহাম্মদ বাওয়ারদি। তাঁর কবর শরীফ খাওয়ারিজমে (কাদ্দাসাল্লাহু আসরারাহুম)। নুফহাত পৃষ্ঠা ৩৪২। রাশহাত পৃষ্ঠা ৪০-৪১।

No comments

Powered by Blogger.