হযরত শায়খ্ আবু আলী ফারমিদী রহামাতুল্লাহি আলাইহি

খাজা আবু আলী ফরমাদীর আভিজাত্য কবর

শায়খ আবু আলী ফরমাদী (৪৩৪-৫১১ হি।)

এলমে তাসাউফে তিনি শায়েখ আবুল হাসান খেরকানী কুদ্দিসা সিররুহুর সাথে সম্পর্ক রাখেন। শায়েখ আবুল কাসেম গুরগানী তুসী র. এর সাথেও তার সম্পর্ক ছিলাে, যিনি কুতুবে রব্বানী ও আরেফে সুবহানী। ছিলেন। তাঁর ওফাত হয় ৪৫০ হিজরীতে। শায়েখ আবুল কাসেম র. এর সম্পর্ক ছিলাে শায়েখ আবুল হাসান খেরকানী র. এর সাথে এবং শায়েখ গুরগানী র. এর শায়েখ ওসমান মাগরেবীর সাথে। আর তার সম্পর্ক ছিলাে। আবু আলী কাতেবের সাথে, আর তাঁর সম্পর্ক ছিলাে আবু আলী রুবারী র. সাথে। আর তার সম্পর্ক ছিলাে সায়্যেদুত্ তায়েফা জুনাইদ বাগদাদী কাদ্দাসাল্লাহু আসরারাহুম এর সাথে। এরপর এই সিলসিলা হজরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু এর সাথে মিলিত হয়েছে। এ ছাড়া শায়েখ আবু আলী ফারমেদী র. শায়েখ আবু সাঈদ আবুল খায়ের র. এর সােহবত লাভ করেন। তাঁর থেকে অনেকভাবে উপকৃত হন এবং তাঁর থেকে খেলাফতও লাভ করেন। শায়েখ আবু সাঈদ আবুল খায়ের র. এর ইন্তেকাল হয় ৪৪০ হিজরীতে। তাঁর বয়স হয়েছিলাে এক হাজার মাস।


বর্ণিত আছে, শায়েখ আবু সাঈদ আবুল খায়ের র. এর মুরিদগণের মধ্যে ৪০ জন খেলাফত লাভ করেন। তন্মধ্যে শায়েখুল ইসলাম আহমদ জাম র. এবং শায়েখ আবু আলী ফারমেদী র. উল্লেখযােগ্য বুজর্গ ছিলেন।
প্রবৃত্তির কুমন্ত্রণা : তরিকায়ে নকশবন্দিয়ার এক বুজর্গ বলেন, খাজা আবু আলী ফারমেদী র. প্রবৃত্তির কুমন্ত্রণা সম্পর্কিত তত্ত্ব অবগত ছিলেন। কিন্তু তা প্রকাশের অনুমতি ছিলাে না। কিন্তু শায়েখ আহমদ জাম র. প্রবৃত্তির। প্ররােচনা সম্পর্কে জানতেন এবং তিনি তা প্রকাশের জন্য আদিষ্ট ছিলেন। শায়েখ আবু আলী ফারমেদী র. এর আসল নাম ছিলাে ফজলুল্লাহ ইবনে মােহাম্মদ। তিনি খােরাসানের শায়েখদের শায়েখ ছিলেন। তিনি তাঁর যুগে এই তরিকার একক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ওয়াজ নসিহতের ক্ষেত্রে তিনি ইমাম আবুল কাশেম কুশাইরী র. এর শিষ্য ছিলেন, যিনি অসংখ্য গ্রন্থের প্রণেতা ও তাফসীর লেখক ছিলেন। ছিলেন স্বীয় যুগের ইমাম ও প্রসিদ্ধ আলেম। তিনি ৪৬৫ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। | 
ওলীর সাক্ষাৎ ঃ তিনি বলেন, আমি যৌবনের প্ররম্ভেই এলেম অন্বেষণের জন্য নিশাপুরে গমন করি। আমি শুনতে পেলাম শায়েখ আবু সাঈদ আবুল খায়ের এক মাস অবস্থান করবেন এবং ইলমী আলােচনা করবেন। আমি সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে তাঁর খেদমতে উপস্থিত হলাম। আমার দৃষ্টি তার সুন্দর চেহারার প্রতি নিবদ্ধ হলাে। আমি তাঁর ভক্ত হয়ে গেলাম। সূফীগণের মহব্বত আমার অন্তরে সুদৃঢ় হলাে। নুফহাতুল উস।

একদা আমি মাদ্রাসার কক্ষে বসা ছিলাম। শায়েখের সাথে সরাসরি দেখা করার উদগ্র বাসনা জাগ্রত হলাে আমার মনে। কিন্তু শায়েখের বাইরে। আসার সময় সুযােগ হচ্ছিলাে না। আমি ধৈর্যধারণ করতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু পারলাম না। আমি বাইরে চলে এলাম। চৌরাস্তায় এসে দেখলাম, শায়েখ বড় একটি দলের সাথে কোথাও যাচ্ছেন। আমি শায়েখের পিছনে পিছনে চলতে লাগলাম। তিনি একস্থানে গিয়ে থেমে গেলেন। আমি এক কোণায় বসে গেলাম। সেখান থেকে শায়েখ আমাকে দেখতে পাচ্ছিলেন। ।

খাজা আবু আলী ফরমাদীর মহামান্য সমাধির আশেপাশের প্রাঙ্গণ

কাওয়ালী শ্রবণ : একবার শায়েখ কাওয়ালী শ্রবণে লিপ্ত হয়ে পড়লেন। তাঁর বিশেষ অবস্থা সৃষ্টি হলাে। তিনি তার পরিধেয় বস্ত্র ছিড়তে শুরু করলেন। কাওয়ালী শেষ হলে ছেড়া টুকরােগুলাে একত্র করা হলাে। শায়েখ এক আস্তিন আঁচলসহ বের করে পৃথক করে রাখলেন। ডাক দিলেন, আবু আলী তুসী তুমি কোথায়? আমি উত্তর দিলাম না। ভাবলাম, শায়েখ এখন পর্যন্ত তাে আমাকে দেখতে পাননি। আর আমাকে তিনি চিনেনও না । হয়তাে তাঁর মুরিদানদের মধ্যে অন্য কোনাে আবু আলীও থাকতে পারেন। শায়েখ দ্বিতীয় বার ডাক দিলেন। আমি চুপ থাকলাম। তৃতীয় বার ডাকলে লােকজন আমাকে বললেন, শায়েখ আপনাকেই ডাকছেন। আমি উঠে শায়েখের সামনে গেলাম। শায়েখ আঁচল-আস্তিনের টুকরাটি আমাকে দিয়ে বললেন, এটাকে সংরক্ষণ কোরাে। আর তুমি আমাদের নিকট এই আস্তিন। এবং আঁচলের মতাে। আমি আদব ও বিনয়ের সঙ্গে বস্ত্রখণ্ডটি গ্রহণ করলাম। উপযুক্ত স্থানে রেখে দিলাম। ওটি থেকে প্রভূত উপকার লাভ করলাম । হৃদয় আলােকিত হলাে এবং একটি বিশেষ অবস্থার সৃষ্টি হলাে।


No comments

Powered by Blogger.